বিবাহের প্রয়োজনীয়তা
-আবদুল হামীদ ফাইযী
মানুষ প্রকৃতিগতভাবে
সমাজবদ্ধ হয়ে বাস করতে অভ্যস্ত। একাকী বাস তার সবভাব-সিদ্ধ
নয়। তাই প্রয়োজন পড়ে সঙ্গিনীর ও কিছু সাথীর; যারা হবে একান্ত আপন। বিবাহ
মানুষকে এমন সাথী দান করে।
মানুষ সংসারে সবয়ংসম্পূর্ণ নয়। বিবাহ মানুষকে দান করে বহু
আত্মীয়-সবজন, বহু সহায় ও সহচর।
মানুষের প্রকৃতিতে যে যৌন-ক্ষুধা আছে, তা দূর করার বৈধ ও
সুশৃঙ্খল ব্যবস্থা হল বিবাহ।
বিবাহ মানুষকে সুন্দর চরিত্র দান করে, অবৈধ দৃষ্টি থেকে
চক্ষুকে সংযত রাখে, লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করে।
বিবাহের মাধ্যমে আবির্ভাব হয় মুসলিম প্রজন্মের। এতে হয় বংশ বৃদ্ধি, রসূল (সাঃ) এর উম্মত
বৃদ্ধি।
পৃথিবী আবাদ রাখার সঠিক ও সুশৃঙ্খল বৈধ ব্যবস্থা বিবাহ। বিবাহ আনে
মনে শান্তি, হৃদয়ে স্থিরতা, চরিত্রে পবিত্রতা, জীবনে পরম সুখ। বংশে
আনে আভিজাত্য, অনাবিলতা। নারী-পুরুষকে করে চিরপ্রেমে আবদ্ধ। দান করে এমন সুখময়
দাম্পত্য, যাতে থাকে ত্যাগ ও তিতিক্ষা, শ্রদ্ধা, প্রেম, স্নেহ ও উৎসর্গ।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ
لَكُمْ مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجاً لِتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ
مَوَدَّةً وَرَحْمَةً إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآياتٍ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ﴾
অর্থাৎ, তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে আর একটি নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের মধ্য হতেই
তোমাদের সঙ্গিনীদেরকে সৃষ্টি করেছেন; যাতে তোমরা ওদের নিকট শান্তি পাও
এবং তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা ও স্নেহ সৃষ্টি করেছেন। চিন্তাশীল
সম্প্রদায়ের জন্য এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে।[1]
ইসলামে বৈরাগ্যের কোন স্থান নেই।
‘‘বৈরাগ্য সাধনে মুক্তি সে আমার নয়, অসংখ্য বন্ধন মাঝে মহানন্দময় লভিব মুক্তির স্বাদ----।’’
‘‘বৈরাগ্য সাধনে মুক্তি সে আমার নয়, অসংখ্য বন্ধন মাঝে মহানন্দময় লভিব মুক্তির স্বাদ----।’’
এই হল মুসলিমের জীবন। তাই তো বিবাহ করা প্রত্যেক নবীর সুন্নত ও
তরীকা। বিবাহ করা এক ইবাদত। স্ত্রী-সঙ্গম করা সদকাহ্তুল্য।[2] যেহেতু এই পরিণয়ে
মুসলিমের বিশেষ উদ্দেশ্য থাকে নিজেকে ব্যভিচার থেকে রক্ষা করা, স্ত্রীর অধিকার আদায়
করা এবং তাকেও ব্যভিচারের হাত হতে রক্ষা করা, নেক সন্তান আশা করা, অবৈধ দৃষ্টি, চিন্তা প্রভৃতি থেকে
নিজেকে দূরে রাখা। প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,
إذَا
تَزَوَّجَ العَبدُ فَقَد استَكمَلَ نِصْفَ الدِّين فَلْيَتَّقِ اللهَ في النِّصف
البَاقي.
‘‘(মুসলিম) বান্দা যখন বিবাহ করে, তখন সে তার অর্ধেক ঈমান (দ্বীন)
পূর্ণ করে, অতএব বাকী অর্ধেকাংশে সে যেন আল্লাহকে ভয় করে।’’[3]
ব্যভিচার থেকে বাঁচার জন্য ও পবিত্র জীবন গঠনের উদ্দেশ্যে বিবাহ
করলে দাম্পত্যে আল্লাহর সাহায্য আসে।[4]
আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿وَأَنْكِحُوا الأَيَامَى مِنْكُمْ
وَالصَّالِحِينَ مِنْ عِبَادِكُمْ وَإِمَائِكُمْ إِنْ يَكُونُوا فُقَرَاءَ
يُغْنِهِمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهِ وَاللهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ﴾
‘‘তোমাদের মধ্যে যারা অবিবাহিত তাদের বিবাহ সম্পাদন কর এবং তোমাদের
দাস-দাসীদের মধ্যে যারা সৎ তাদেরও। তারা অভাবগ্রস্ত হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে
তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ তো প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।[5]
জগদ্গুরু মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেন,
يَا
مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنْ اسْتَطَاعَ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ فَإِنَّهُ
أَغَضُّ لِلْبَصَرِ وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ
بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ.
‘‘হে যুবকদল! তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি (বিবাহের অর্থাৎ স্ত্রীর
ভরণপোষণ ও রতিক্রিয়ার) সামর্থ্য রাখে সে যেন বিবাহ করে। কারণ, বিবাহ চক্ষুকে
দস্ত্তরমত সংযত করে এবং লজ্জাস্থান হিফাযত করে। আর যে ব্যক্তি ঐ সামর্থ্য রাখে না, সে যেন রোযা রাখে। কারণ, তা যৌনেন্দ্রিয়
দমনকারী।’’[6]
তিনি আরো বলেন,
النِّكَاحُ
من سُنَّتي . فَمَن لَم يَعمَل بسُنَّتي فَلَيسَ مني.
‘‘বিবাহ করা আমার সুন্নত (তরীকা)। সুতরাং যে ব্যক্তি আমার সুন্নত
(তরীকা) অনুযায়ী আমল করে না, সে আমার দলভুক্ত নয়।’’[7]
সুতরাং বিয়ের বয়স হলে, যৌন-পিপাসায় অতিষ্ঠ হলে এবং নিজের
উপর ব্যভিচারের অথবা গুপ্ত অভ্যাসে স্বাস্থ্য ভাঙ্গার আশঙ্কা হলে বিলম্ব না করে
যুবকের বিবাহ করা ওয়াজেব। বাড়ির লোকের উচিৎ, এতে তাকে সহায়তা করা এবং ‘ছোট’ বা ‘পড়ছে’ বলে বিবাহে বাধা না
দেওয়া। যেমন পূর্বে আরো অবিবাহিত ভাই বা বোন থাকলে এবং তাদের বিয়ের ব্যবস্থা বা
ইচ্ছা না হলে এই যুবককে বিবাহে বাধা দেওয়ার অধিকার পিতা-মাতার বা আর কারো নেই।
আল্লাহর আনুগত্যে গুরুজনের আনুগত্য ওয়াজেব। যেখানে আল্লাহর অবাধ্যতার ভয় ও আশঙ্কা
হবে, সেখানে আর কারো আনুগত্য নেই। বরং এই সব ক্ষেত্রে বিশেষ করে ‘মনমত পণ’ না পাওয়ার জন্য বিয়ে না
দিলে মা-বাপের আনুগত্য হারাম। সুতরাং যুবকের উচিৎ, যথাসময়ে বিনা পণে
মা-বাপ রাজী না হলেও রাজী করতে চেষ্টা করে বিবাহ করা। নচেৎ তার অভিভাবক আল্লাহ।
অনেক সময় দ্বীনদার-পরহেজগার পরিবেশের পুণ্যময়ী সুশীলা তরুণীর সাথে
বিবাহে মা-বাপ নিজস্ব কোন স্বার্থে রাজী হয় না। অথবা এমন পাত্রী দিতে চায়; যে দ্বীনদার নয়।
দ্বীনদার যুবকের এ ক্ষেত্রেও মা-বাপের কথা না মানা দ্বীনদারী।[8]
বৈবাহিক জীবন দু-একদিনের সফর নয়; যাতে দু-একদিন পর
সহজভাবে সঙ্গী পরিবর্তন করা যাবে। সুতরাং এখানে ছেলে-মেয়ে সকলেরই বুঝাপড়া ও
পছন্দের অধিকার আছে।
পক্ষান্তরে দ্বীন ছাড়া অন্য স্বার্থে ছেলে যদি মা-বাপের কথা না
মেনে তাদেরকে নারাজ করে বিবাহ করে, তবে এমন ছেলে নিশ্চয়ই অবাধ্য।
অবাধ্য মাতা-পিতার এবং অবাধ্য আল্লাহ ও তাঁর রসূলের। এ বিষয়ে আরো কিছু আলোচনা আসবে
‘বিবাহ প্রস্তাব ও তার শর্তাবলী’তে।
ফুটনোটঃ
[1] (সূরা আর-রূম (৩০) : ২১)
[2] (মুসলিম ১০০৬নং)
[3] (সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ৬১৪৮নং)
[4] (সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ৩০৫০নং, মিশকাতুল মাসাবীহ
৩০৮৯নং)
[5] (সূরা আন-নূর (২৪) : ৩২)
[6] (বুখারী, মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩০৮০নং)
[7] (ইবনে মাজাহ ১৮৪৬নং)
[8] (আল-লিকাউশ শাহরী ৩/৪২পৃঃ, ফাতাওয়াল মারআহ ৫৬পৃঃ)
0 comments:
Post a Comment