মুসলিম-সমাজে যখন অজ্ঞতা ও বিজাতির সংশ্রব একত্র হয়েছে তখন ভিন্ন সমাজের রোগ-ব্যধি ও রীতি-রেওয়াজে আক্রান্ত হওয়া আশ্চর্যের কিছু নয়। সকল অন্যায় ও প্রান্তিকতা এবং শোষণ ও নির্যাতনমূলক রীতি-নীতি থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত ও পবিত্র আদর্শ ইসলামকে পেয়েও যারা সেদিকে ভ্রূক্ষেপ করে না এবং বিজাতির অন্ধ অনুকরণের মোহ কাটাতে পারে না, শুধু আদম-শুমারির মুসলমানিত্ব কি পারবে ঐ সকল মরণ-ব্যাধি থেকে তাদেরকে রক্ষা করতে?
বর্ণবাদী হিন্দু ও ভোগবাদী ইংরেজের সংশ্রব থেকে উদাসীন মুসলমানদের মাঝে একদিকে যেমন অবিশ্বাস ও পৌত্তলিকতার অনুপ্রবেশ ঘটেছে অন্যদিকে অনাচার ও অশ্লীলতা এবং বহু নিপীড়নমূলক প্রথারও বিস্তার ঘটেছে। তবে ফিকরী কুফর ও চিন্তাগত অবিশ্বাসের তালিকায় সবচেয়ে ভয়াবহ হচ্ছে সেক্যুলারিজম আর সামাজিক প্রথা ও প্রচলনের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক বস্ত্ত হল যৌতুক। এর একটি যদি হয় চিন্তা ও মস্তিষ্কের পচন তো অন্যটি সমাজ-দেহের ক্যান্সার। একটি দ্বীন ও ঈমানের ঘাতক তো অন্যটি পারিবারিক শান্তি ও সামাজিক শৃঙ্খলার মৃত্যুদূত। এই দুই বস্ত্তর প্রথমটি হচ্ছে ইংরেজের উত্তরাধিকার আর দ্বিতীয়টি হিন্দু-সমাজের আশীর্বাদ।
দ্বিতীয় ব্যধিটি সম্পর্কেই বর্তমান নিবন্ধে কিছু কথা বলার ইচ্ছা করছি।
মূল প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে একটি কথা। তা এই যে, جهاز আরবীতে একটি শব্দ আছে, جهاز যার উর্দু তরজমা করা হয় জাহীয। কেউ কেউ অগ্রপশ্চাৎ না ভেবেই এই শব্দের তরজমা করেন যৌতুক। যা সঠিক নয়।
জাহায বা জাহীয হচ্ছে, কন্যাকে দেওয়া পিতার উপহার। স্বামী বা শ্বশুরালয়ের কেউ এর মালিক নয়, এর মালিক কন্যা নিজে। পিতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কন্যাকে তা দিয়ে থাকে। এতে স্বামী ও শ্বশুরালয়ের দাবি ও চাপাচাপি তো দূরের কথা, কন্যার পক্ষ থেকেও কোনো দাবি থাকে না। এটা নামধামের জন্য দেওয়া হয় না। যৎসামান্য উপহার পিতা নিজের সামর্থ্য অনুসারে কন্যাকে দিয়ে থাকেন।
এই উপহারও বিয়ের সময় দেওয়া সুন্নত, মুস্তাহাব নয়; নিছক মোবাহ, যদি না কোনো সামাজিক চাপ কিংবা প্রথাগত বাধ্য-বাধকতা থাকে। অন্যথায় তা সম্পূর্ণ নাজায়েয ও হারাম হয়ে যায়। হাদীস শরীফে আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজ্বের ঐতিহাসিক ভাষণে বলেছেন-
ألا ولا يحل لامرئ من مال أخيه شيء إلا بطيب نفس منه
সাবধান! কারো জন্য তার ভাইয়ের কিছুমাত্র সম্পদও বৈধ নয়, যদি তার স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি না থাকে।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৫৪৮৮; সুনানে দারাকুতনী, হাদীস : ২৮৮৩; শুআবুল ঈমান বায়হাকী, হাদীস : ৫৪৯২
অর্থাৎ কেউ কিছু দিলেই তা ভোগ করা হালাল হয় না, যে পর্যন্ত না খুশি মনে দেয়। পুত্র-কন্যাও এ বিধানের বাইরে নয়। সুতরাং পিতা যদি বাধ্য হয়ে নিজের কন্যাকেও কোনো কিছু দেয় তবে তা গ্রহণ করা তার জন্যও বৈধ নয়। তাহলে স্বামী বা শ্বশুরালয় থেকে যদি কন্যার উপহার দাবি করা হয় কিংবা কোনো তালিকা দেওয়া হয় তাহলে তা কীভাবে বৈধ হবে? এ তো মোবাহ জাহিয নয়. সরাসরি যৌতুক।
কেউ কেউ রোখসতির সময় কন্যাকে কিছু উপহার, কিছু ঘরকন্নার সামগ্রি দেওয়াকে মাসনূন মনে করেন। এ প্রসঙ্গে সীরাতের একটি ঘটনা উল্লেখ করা হয় যে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ কন্যা ফাতিমা রা.কে রোখসতির সময় কিছু জিনিস দিয়েছিলেন। মুসনাদে আহমদ (হাদীস : ৬৪৩) ও সহীহ ইবনে হিববানে (হাদীস : ৬৯৪৭) এ তিনটি বস্ত্তর কথা আছে। একটি ঝুলদার চাদর, একটি পানির মশক ও একটি বালিশ, যাতে ইযখির ঘাসের ছোবড়া ভরা ছিল। মুসনাদে আহমদের এক রেওয়ায়েতে (হাদীস : ৮৩৮) দুটি ঘড়া ও দুটি যাঁতার কথাও আছে।
কিন্তু উসূলে ফিকহের বিধান মতে শুধু এইটুকু ঘটনার দ্বারা কোনো আমল মাসনূন প্রমাণিত হয় না, শুধু মোবাহ বা বৈধ প্রমাণিত হয়। ঐ কাজ মাসনূন হলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাতে উৎসাহিত করতেন এবং তাঁর অন্য কন্যাদের বিয়েতেও এ ধরনের উপহার দিতেন। তেমনি উম্মুল মুমিনীনদেরকেও তাদের পিত্রালয় থেকে উপহার দেওয়া হত। কিন্তু কোনো রেওয়ায়েতে এমন কোনো কিছুই পাওয়া যায় না। শুধু উম্মে হাবীবা রা. সম্পর্কে পাওয়া যায়, তাঁর জন্য হাবাশার বাদশা নাজাশী নিজের পক্ষ থেকে কিছু উপহার পাঠিয়েছিলেন। (সুনানে নাসায়ী, হাদীস : ৩৩৫০; তবাকাতে ইবনে সাদ ৮/২৯৩)
ফাতেমা রা.-এর ঘটনার আরেকটি দিকও রয়েছে, যা বিবেচনা করা দরকার। তা এই যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন হযরত আলী রা.-এরও অভিভাবক। সুতরাং সম্ভাবনা আছে যে, ঐ জিনিসগুলো তিনি পাঠিয়েছিলেন আলী রা.-এর পক্ষ থেকে। কারণ বিয়ের সময় তাঁর ঘরে ঐ ধরনের কোনো আসবাবপত্র ছিল না। মুসনাদে আহমদ (হাদীস : ৬০৩) সহ বিভিন্ন কিতাবে নির্ভরযোগ্য সনদে এই তথ্য রয়েছে। মাওলানা মুহাম্মাদ মনযূর নুমানী রাহ. মাআরিফুল হাদীস (৩/৪৬০-৪৬১) এই ব্যাখ্যাই করেছেন।
কোনো কোনো রেওয়ায়েত থেকে বোঝা যায়, এই জিনিসগুলো দেওয়া হয়েছিল তাঁর মোহরের টাকা থেকে, কিন্তু ঐসব রেওয়ায়েত সহীহ নয়।
মোটকথা, রোখসতির সময় মেয়েকে কিছু উপহার দেওয়া বা ঘরকন্নার প্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রদান করাকে কোনো সাহাবী ও তাবেয়ী মাসনূন বা মুস্তাহাব বলেছেন, এমন তথ্য আমার জানা নেই। ফিকহ-ফতোয়ার নির্ভরযোগ্য কিতাবের মোহর-অধ্যায়ের মাসায়েল থেকে এর বৈধতাটুকুই প্রমাণিত হয়।
মোটকথা, কন্যার বিয়ে বা রোখসতির সময় পিতা নিজ সাধ্য অনুসারে তাকে যে গহনাগাটি বা সামানপত্র শুধু আল্লাহর রেযামন্দির জন্য উপহার দেয় যাকে আরবীতে বলে জাহায, এবং উর্দূতে যার তরজমা জাহীয শব্দ দ্বারা করা হয় একে মোবাহ বা মুস্তাহাব যাই বলুন না কেন প্রচলিত যৌতুকের সাথে এর বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই। এটা উর্দু ভাষার সীমাবদ্ধতা যে, তাতে যৌতুকের জন্যও জাহীয শব্দ ব্যবহার করা হয়। আর মূল আরবীতে তো যৌতুকের সমার্থক কোনো শব্দই নেই। কারণ সম্ভবত এই যে, ইসলামী যুগে তো দূরের কথা, জাহেলী যুগেও আরব-সমাজে আর যা কিছুই ছিল, যৌতুকের অভিশাপ ছিল না। সম্প্রতি আরবরা একটি বিদেশি শব্দের অপভ্রংশ ‘দাওতা’ যৌতুকের জন্য ব্যবহার করে থাকে।
যৌতুক শব্দের মূল প্রয়োগে কতটুকু ব্যাপকতা আছে তা আমার জানা নেই। তবে এখন তা একটি পরিভাষা। বিয়ের সময় বা বিয়ের আগে-পরে যে কোনো সময় কনে বা কনেপক্ষের নিকট থেকে বর বা বরপক্ষের লোকেরা যে সম্পদ বা সেবা গ্রহণ করে কিংবা সামাজিক প্রথার কারণে তাদেরকে দেওয়া হয়, তদ্রূপ কনে বা কনেপক্ষের লোকেরা মোহর ও ভরণ-পোষণের অধিক যা কিছু উসূল করে বা সামাজিক প্রথার কারণে তাদেরকে দেওয়া হয় এই সবই যৌতুক। এটিই বর্তমান নিবন্ধের বিষয়বস্তু।
একটি হারাম, অনেক হারামের সমষ্টি
যৌতুকের লেনদেন এত জঘণ্য অপরাধ যে, তা শুধু হারাম বা কবীরা গুনাহ নয়, এমন অনেকগুলো হারাম ও কবীরা গুনাহর সমষ্টি, যার কোনো একটিই যৌতুকের জঘণ্যতা ও অবৈধতার জন্য যথেষ্ট ছিল।
১. মুশরিক-সমাজের রেওয়াজ
যৌতুকের সবচেয়ে নগণ্য দিক হল, তা একটি হিন্দুয়ানি রসম বা পৌত্তলিক সমাজের প্রথা। আর কোনো মুসলিম কোনো অবস্থাতেই কাফের ও মুশরিকদের রীতি-নীতি অনুসরণ করতে পারে না।
২. জুলুম ও নির্যাতন
যৌতুক শুধু জুলুম নয়, অনেক বড় জুলুম। আর তা শুধু ব্যক্তির উপর নয়, গোটা পরিবার ও বংশের উপর জুলুম। যৌতুকের কারণে কনে ও তার অভিভাবকদের যে মানসিক পীড়ন ও যন্ত্রণার শিকার হতে হয় তা তো ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। অথচ কাউকে সামান্যতম কষ্ট দেওয়া ও জুলুম করাও হারাম ও কবীরা গুনাহ।
জালিমের উপর আল্লাহর লা’নত ও অভিশাপ এবং জালিমের ঠিকানা জাহান্নাম। মজলুমের ফরিয়াদ সরাসরি আল্লাহর দরবারে পৌঁছে যায় এবং যেকোনো মুহূর্তে আল্লাহ জালিমের উপর আযাব ও গযব নাযিল করতে পারেন।
৩. পরস্ব হরণ
কুরআন মজীদে একাধিক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন-
لا تأكلوا اموالكم بينكم بالباطل
তোমরা বাতিল উপায়ে একে অন্যের সম্পদ গ্রাস করো না।-সূরা বাকারা : ১৮৮; সূরা নিসা : ২৯
বিদায় হজ্বের ঐতিহাসিক ভাষণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছেন-
إن دماءكم وأموالكم وأعراضكم عليكم حرام كحرمة يومكم هذا في شهركم هذا في بلدكم هذا.
নিঃসন্দেহে তোমাদের জান, মাল, ইজ্জত-আব্রু তোমাদের পরস্পরের জন্য এমনভাবে সংরক্ষিত, যেমন হজ্বের দিবসটি হজ্বের মাস ও (হজ্বের শহর) মক্কায় সংরক্ষিত।
সুতরাং কারো জান-মাল, ইজ্জত-আব্রুতে হস্তক্ষেপ করা হজ্বের সম্মানিত মাসে, হজ্বের সম্মানিত দিবসে হারাম শরীফের উপর হামলার মতো অপরাধ। (সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৭৩৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৬৭৯)
নিঃসন্দেহে যৌতুক নেওয়া ‘আকল বিলবাতিল’ বা পরস্ব হরণের অন্তর্ভুক্ত। বিয়ে একটি পবিত্র বন্ধন। এটি ব্যবসা বা অর্থোপার্জনের উপায় নয়। তেমনি বর-কনেও ব্যবসার পণ্য নয়, যাদেরকে বিক্রি করে পয়সা কামানো হবে। যারা বিয়ের মতো পবিত্র কাজকে ‘সোর্স অফ ইনকাম’ বানায় তারা আল্লাহর বিধানের অবজ্ঞাকারী। কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা যে ‘আকল বিল বাতিল’ কে হারাম করেছেন তার অর্থই হল, এমন কোনো পন্থায় সম্পদ উপার্জন, যাকে আল্লাহ উপার্জনের মাধ্যম বানাননি। শরীয়তের দৃষ্টিতে এটি হজ্বের মহিমান্বিত মাসের মহিমান্বিত দিবসে খানায়ে কাবার উপর হামলা করার মতো অপরাধ।
৪. ডাকাতি ও লুটতরাজ!
কে না জানে, অন্যের সম্পদ লুট করা কবীরা গুনাহ! বড় কোনো সম্পদ নয়, যদি জোর করে কেউ কারো একটি ছড়িও নিয়ে যায় সেটাও গছব ও লুণ্ঠন, যা সম্পূর্ণ হারাম। লুণ্ঠিত বস্ত্ত অনতিবিলম্বে ফিরিয়ে দেওয়া ফরয। হাদীস শরীফে ইয়াযীদ ইবনুস সায়েব রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
لا يأخذن أحدكم متاع صاحبه لعبا جادا وإذا أخذ أحدكم عصا أخيه فليرددها عليه
অর্থাৎ কেউ যেন তার ভাইয়ের জিনিস উঠিয়ে না নেয়; না ইচ্ছা করে, না ঠাট্টাচ্ছলে। একটি ছড়িও যদি কেউ তুলে নেয় তা যেন অবশ্যই ফিরিয়ে দেওয়া হয়। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৭৯৪০; ১৭৯৪১; ১৭৯৪২; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৫০০৩; জামে তিরমিযী, হাদীস : ২১৬০)
যৌতুক নেওয়া কারো সামান্য জিনিস তুলে নেওয়ার মতো বিষয় নয়; বরং তা সরাসরি লুণ্ঠন ও ডাকাতি। পার্থক্য শুধু এই যে, এখানে ছুরি-চাকুর বদলে বাক্যবান ও চাপের অস্ত্র প্রয়োগ করা হয়, যা মজলুমের মন-মানসে অনেক বড় ও গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে। তো ডাকাতি ও লুটতরাজের যে গুনাহ যৌতুক নেওয়ার গুনাহও তার চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়।
৫. রিশওয়াত ও ঘুষ
আত্মসাৎ ও অবৈধ উপার্জনের যতগুলো পন্থা আছে তন্মধ্যে নিকৃষ্টতম ও জঘণ্যতম একটি পন্থা হল রিশওয়াত। এর বাংলা তরজমা করা হয় ‘ঘুষ’ বা ‘উৎকোচ’।
অনেকে মনে করেন, অফিস-আদালতে নিজের বা অন্যের কোনো বৈধ পাওনা উসূল করার জন্য বা সঠিক রায় পাওয়ার জন্য কর্মচারী-কর্মকর্তাদের চাপ, অশোভন আচরণের শিকার হয়ে যে অর্থ দেওয়া হয় কিংবা অবৈধ সুবিধা হাসিলের জন্য যা খরচ করা হয় তা হচ্ছে ঘুষ। অবশ্যই তা ঘুষ। তবে ঘুষ ও রিশওয়াত শুধু এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। শরীয়তের দৃষ্টিতে রিশওয়াতের অর্থ আরো ব্যাপক। কারো কোনো হক বা পাওনা, যা কোনো বিনিময় ছাড়াই তার পাওয়া উচিত, তা যদি বিনিময় ছাড়া না দেওয়া হয় তাহলে ঐ বিনিময়টাই হল ঘুষ বা রিশওয়াত, যা হতে পারে অর্থ, সেবা বা অন্য কোনো সম্পদ। এটা দেওয়া হারাম, নেওয়া হারাম এবং এই লেনদেনে মধ্যস্থতা করাও হারাম। এটা এত বড় অপরাধ যে, এর সাথে যুক্ত সবার উপর আল্লাহর লা’নত ও অভিশাপ। (আননিহায়া ফী গরীবিল হাদীস ওয়াল আছার, ইবনুল আছীর (৬০৬ হি.) ২/২২৬; আলফাইক ফী গরীবিল হাদীস, যমখশরী (৫৩৮ হি.)
হাদীস শরীফে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
لعنة الله على الراشي والمرتشي
অর্থাৎ ঘুষদাতা ও ঘুষগ্রহীতা উভয়ের উপর আল্লাহর অভিশাপ। মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৬৭৭৮, ৬৯৮৪; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৫০৭৭; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ২৩১৩
অন্য হাদীসে আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
لعن الله الراشي والمرتشي والرائش الذي يمشي بينهما
ঘুষদাতা ও ঘুষগ্রহীতা ও ঘুষের লেনদেনে মধ্যস্থতাকারী সকলের উপর আল্লাহ অভিশাপ করেছেন।-আলমুস্তাদরাক আলাস সহীহাইন, হাকীম আবু আবদিল্লাহ ৪/১০৩
বিয়ের পয়গাম দিতে পারা নারী-পুরুষের বৈধ অধিকার। পয়গাম কবুল হলে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারাও নারী-পুরুষের বৈধ অধিকার। বিয়ের পর স্বামী তার স্ত্রীকে পাওয়া এবং স্ত্রী তার স্বামীকে পাওয়া তাদের প্রত্যেকের ফরয হক ও অপরিহার্য অধিকার। এরপর যতদিন বিবাহ-বন্ধন অটুট থাকে, একে অন্যের নিকট থেকে শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করাও স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য অধিকার। তো এই অধিকারগুলোর কোনো একটি পাওয়ার জন্য বা প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য কোনোরূপ অর্থব্যয়ের বাধ্যবাধকতা সম্পূর্ণ অবান্তর। সুতরাং এক্ষেত্রে কোনো অর্থ-সম্পদ দাবি করা হলে কিংবা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ চাপের মাধ্যমে কোনো কিছু গ্রহণ করা হলে তা হবে সরাসরি ঘুষ ও রিশওয়াত, যার লেনদেন সম্পূর্ণ হারাম এবং লেনদেনকারী ও মধ্যস্থতাকারী সবাই আল্লাহর লা’নত ও অভিশাপের উপযুক্ত।
৬. লালসা হিংস্রতা ও চারিত্রিক হীনতা
এই সব পাশবিক প্রবণতা থেকে নিজেকে মুক্ত করা প্রত্যেক নর-নারীর উপর ফরয। পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে এইসব ঘৃণ্য প্রবণতা প্রকাশিত হওয়া চরম দুর্ভাগ্যজনক। যে সমাজের লোকেরা এই সব দোষ ও দুর্বলতার সংশোধন করে না; বরং কর্ম ও আচরণে পশুত্বের পরিচয় দিতে থাকে তাকে তো মনুষ্যসমাজ বলা যায় না। একজন ইনসান, উপরন্তু সে যদি হয় মুমিন, তাহলে অন্যের ধন-সম্পদ ও ইজ্জত-আব্রুর উপর কীভাবে হস্তক্ষেপ করে? কারো দুর্বলতা ও অসহায়ত্বের সুযোগ সে কীভাবে নেয়? এ তো কমিনা ও কমবখত লোকের কাজ। যার মাঝে বিন্দুমাত্র শরাফতও আছে তারও তো এই অপকর্মের হীনতা উপলব্ধি করা কঠিন নয়।
যৌতুক, সন্ত্রাস, নারী নির্যাতন এবং যত ধরনের দুর্নীতি এই সমাজে প্রচলিত তা সবই ঐ পাশবিক চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। এখন প্রত্যেকের কর্তব্য, নিজেকে ও নিজের অধীনস্ত সকলকে পশুত্বের হীনতা থেকে মনুষ্যত্বের মর্যাদায় উন্নিত করার চেষ্টা করা। এটা এখন সময় ও সমাজের অপরিহার্য-দাবি। আর এর একমাত্র উপায় হচ্ছে, আখিরাতের স্মরণ ও আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার অনুভূতিকে শক্তিশালী করা। এজন্য দ্বীনী শিক্ষার বিস্তার, আখলাক-চরিত্রের সংশোধন এবং নেককার বুযুর্গানে দ্বীনের জীবন ও আদর্শ চর্চার কোনো বিকল্প নেই।
৭. এক অপরাধ অসংখ্য অপরাধ
শরীয়তের একটি সাধারণ নীতি এবং একটি স্বতঃসিদ্ধ কথা এই যে, কোনো কাজের দ্বারা যদি হারামের দরজা খোলে তাহলে সেটাও হারাম হয়ে যায়। তাহলে যে কাজ নিজেও হারাম এবং আরো অনেক হারামের জনক তা কত জঘণ্য ও ভয়াবহ হতে পারে? তো যৌতুক এমনই এক অপরাধ, যা আরো বহু অপরাধের জন্ম দিয়ে থাকে।
যৌতুকের দাবি পূরণের জন্য অনেক অভিভাবক সুদ-ঘুষের কারবার ও বিভিন্ন হারাম উপার্জনে লিপ্ত হয়। এমনকি আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটে।
আর স্ত্রীর উপর নির্যাতন-নিপীড়ন এমনকি হত্যা ও আত্মহত্যাও সাধারণ বিষয়।
তেমনি কনেপক্ষ শক্তিশালী হলে দুই পরিবারে বিবাদ-বিসংবাদ, মামলা-মোকদ্দমা এমনকি খুন-জখম পর্যন্ত হতে থাকে। দৈনিক পত্রিকার পাঠক এসব ঘটনায় রীতিমতো অভ্যস্ত!
যৌতুকের সবচেয়ে ন্যূনতম ক্ষতিটি হল এর কারণে দাম্পত্য সম্পর্কের উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হয়ে যায়। পরিবারে অশান্তির আগুন জ্বলতে থাকে। ঝগড়া-বিবাদ গালিগালাজ এমনকি মারধর পর্যন্ত হয়। যার প্রত্যেকটিই এক একটি কবীরা গুনাহ এবং পরিবার ও সমাজকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে টেনে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট। সন্তানমাত্রই আল্লাহর রহমত, তবে কন্যা আল্লাহর বিশেষ রহমত কিন্তু যৌতুকের কারণে অনেক পিতামাতা কন্যার প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করেন, যা চরম মূর্খতা ও জাহিলিয়াত।
আরো বেদনার বিষয় এই যে, ছেলের মা বোনেরাও নববধুর কাছে যৌতুক দাবি করতে পিছপা হয় না। নারী হয়েও তারা নারীর যন্ত্রণা বোঝে না, তার প্রতি সহমর্মী হয় না। অনেক ক্ষেত্রে তো জা-ননদ-শাশুড়িই হয়ে ওঠে নব বধুর সবচেয়ে বড় দুশমন।
তো যারা যৌতুক দাবি করে বা গ্রহণ করে তাদের উচিত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এই বাণী স্মরণ রাখা-
لا يدخل الجنة لحم نبت من سحت النار أولى به
ঐ দেহ বেহেশতে যাবে না, যা হারাম (গিযা) থেকে উৎপন্ন হয়েছে। দোযখের আগুনই তার অধিক উপযোগী।-সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ১৭২৩, ৪৫১৪; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস : ২০৭১৯
তদ্রূপ যারা এই কু-রসমের প্রতিরোধ করে না; বরং নিজেদেরকে অক্ষম মনে করে কিংবা যৌতুক দিয়ে জামাতার মনোতুষ্টি কামনা করে তাদের মনে রাখা উচিত, কারো পাপ-দাবি পূরণ করাও পাপ। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা তাদের দ্বিতীয়বার স্মরণ করা উচিত-ঘুষদাতা ও ঘুষগ্রহীতা উভয়ের উপর আল্লাহর অভিশাপ।
এই অভিশপ্ত ব্যধি থেকে আল্লাহ আমাদের সমাজকে পবিত্র করুন, সকল কুফরী ও শিরকী কর্মকান্ড থেকে আমাদেরকে রক্ষা করুন এবং একমাত্র তাঁরই সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এই সকল অপকর্মের বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তোলার তাওফীক দান করুন।
প্রশ্ন:
শ্বশুর-শাশুড়িকে আব্বা-আম্মা বলা যাবে কি? যদি বলা যায় তাহলে ওই হাদীসের ব্যাখ্যা কী হবে, যে হাদীসে অন্যকে পিতা বলে সম্বোধন করতে নিষেধ করা হয়েছে?
উত্তর:
হাদীসে যে অন্যকে পিতা বলে সম্বোধন করতে নিষেধ করা হয়েছে এর অর্থ বংশপরিচয় প্রকাশ করার ক্ষেত্রে আসল পরিচয় গোপন রেখে নিজের পিতার নাম উল্লেখ না করে, অন্যের নাম প্রকাশ করা। যেমন-আইডি কার্ড, পাসপোর্ট, জন্মনিবন্ধন অথবা এমন কোনো দলিল বা স্থান যেখানে কোনো ব্যক্তির জন্মদাতা পিতার নাম প্রকাশ করা জরুরি হয়। আর স্বামী বা স্ত্রীর পিতা-মাতাকে সম্মানার্থে আব্বা-আম্মা বলে সম্বোধন করার দ্বারা বংশপরিচয় গোপন হয় না। তাই শ্বশুর-শাশুড়িকে আব্বা-আম্মা বলা হাদীসের নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত নয় এবং তা জায়েয।
আহকামুল কুরআন, জাসসাস ৩/৩৫৪; সহীহ বুখারী, হাদীস : ৬৭৬৬; ৬৭৬৮, ৪৩২৬, ৪৩২৭,৩৫০৮; উমদাতুল কারী ১৬/৭৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১১২-১১৫; ইকমালুল মুলিম ১/৩১৯; তাফসীরে রূহুল মাআনী ৯/২১০; তাফসীরে কুরতুবী ১২/৬৭; ফাতহুল মুলহিম ১/২৩৬; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৯/৪৯-৫২; মুসনাদে আহমদ ১/১৭৪, ৩/৮৯; ফয়যুল কাদীর ৬/৪৬; কেফায়াতুল মুফতী ৯/১১৮
আহকামুল কুরআন, জাসসাস ৩/৩৫৪; সহীহ বুখারী, হাদীস : ৬৭৬৬; ৬৭৬৮, ৪৩২৬, ৪৩২৭,৩৫০৮; উমদাতুল কারী ১৬/৭৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১১২-১১৫; ইকমালুল মুলিম ১/৩১৯; তাফসীরে রূহুল মাআনী ৯/২১০; তাফসীরে কুরতুবী ১২/৬৭; ফাতহুল মুলহিম ১/২৩৬; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৯/৪৯-৫২; মুসনাদে আহমদ ১/১৭৪, ৩/৮৯; ফয়যুল কাদীর ৬/৪৬; কেফায়াতুল মুফতী ৯/১১৮
ইমাম সুহাইব ওয়েব একদিন এক আলোচনায় বলেছিলেনঃ "বিয়ে ফিকহের বিষয়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে সহজ এবং আমাদেরসংস্কৃতিতে সবচেয়ে কঠিন একটি বিষয় ।
একটা ছেলে যদি বিয়েকরতেও চায়, তার প্রতিবন্ধকতা আসে -- " তুমি তো এখনো তেমন আয় করো না "। অথচ এই আয় না করা ছেলেটা জীবনের একটা কঠিন সময় অতিক্রম করে, যদিও কোনভাবে ভয়াবহ কঠিন মুহূর্তগুলো পাশ কাটিয়ে একটা চাকুরি করে বিয়ে করতে যায়, তার সামনে কমপক্ষে একবছরের বেতনের সমান খরচের বিয়ের আয়োজনের বার্তা আসে।
আমাদের এই দেশ এখন অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু, তবু এই সমাজের মানুষগুলো বিশাল ঢাক-ঢোল আয়োজন ছাড়া বিয়ে না করলে তাকে গ্রহণকরেনা।
আরো আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো, ইসলামিক [মুসলিম বলছিনা কিন্তু] অথবা নন-ইসলামিক -- যেকোন পরিবারগুলোই পৃথিবীর আর কিছু যা-ই থাক, বিয়েতে বিশাল আয়োজনের,টাকা খরচ করার, সমাজের কাছে মাথা উঁচু করে(!) তাদের খুশি করার চেষ্টাতে কিছুতেই কমতি করেনা।
মানুষের ইসলামের অনুভূতি মূলত আর্থিক অবস্থানের সাথে সাথে নিজস্ব ব্যাখ্যা পায়। যার হয়তএকটা বাড়ি থাকে, গাড়ি থাকে, হাতে কিছু মোটা অংকের ক্যাশ থাকে, তখন তার কাছে বিয়ের আদিখ্যেতা খরচ করতে নাপারাটা *ছোট মনের* বলেপ্রতীয়মান হয়।
আমাদের দেশের বিয়েগুলোতে মেয়েপক্ষ সজ্ঞানে-অজ্ঞানেছেলেপক্ষের কাছে*দায়গ্রস্ত*থাকেন, খুব প্রচলিত একটা ঘটনা হলো ফার্নিচার দেয়া।
মেয়ের বাবা যেমন অর্থ-সম্পদেরমালিকই হোন না কেন, তিনি ধার-দেনা করে মেয়ের বিয়েতে খরচ করতে মরিয়া হয়ে যান। মেয়ের সুখের জন্য তাকে যে করেই হোক জামাইকে কিছু দিতে হবে।
এখানেও যন্ত্রণা, কষ্ট, ধার-দেনা। কতরকম খোঁটা খাওয়ার ভয়! বিয়ের আয়োজনেই অস্থির অবস্থা।ওইদিকে আছে বৌভাত, হলুদ, আরো কত কী!!
আল্লাহ তো কুরআনুল কারীমে জানিয়ে দিয়েছেন আমাদেরকেঃ
[১] "কিছুতেই অপব্যয় করো না। নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানেরভাই। শয়তান স্বীয় পালনকর্তার প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ"। [আল ইসরাঃ ২৬-২৭]
[২] "খাও ও পান কর এবং অপব্যয় করো না। তিনি অপব্যয়ীদেরকে পছন্দ করেন না"। [আল আরাফঃ ৩১]
আরো কতরকম আদিখ্যেতা বিয়ের অনুষ্ঠানে! যেগুলোর কোনটাই সুন্নাহনয়, বরং স্কলারদের মতে অনেকগুলোই নিষিদ্ধ। আঞ্চলিক কিছু প্র্যাকটিস তো বলার মতই না, এতই জঘন্য। আমার এক বোনের বিয়েতে সেই বাড়ির নিয়মানুযায়ী দুধে পা ডুবানো, আয়নায় মুখ দেখা, অনেকগুলো মিষ্টি খাওয়া -- এরকম আরো অনেকগুলো অসভ্য ঢং করার পর ক্লান্ত পরিশ্রান্ত মানুষটাকে ঘুমাতে দেয়া হয় কয়েক ঘন্টা পর, মাঝরাতে পেরিয়ে গেলে। এইসব ছাড়াও সার্বজনীন আর বাহুল্য কালচার যেসব আছেঃ
*. আংটি পড়ানো
*. দামী কার্ড ছাপানো,
*. শুধু শুধু বা আভিজাত্য জাহিরের জন্য দামী কমিউনিটি সেন্টার/হোটেল ইত্যাদি ভাড়া করা,
*. শুধু মাত্র বিয়ের দিনের জন্য দামী পোশাক কেনা যা আর কখনও পড়া হয় না
*. গায়ে হলুদ
*. কনের/বরের সাজসজ্জায়অপ্রয়োজনীয় খরচ।
*. অনুষ্ঠানে নারী পুরুষ একসাথে অবাধে মেলামেশার সুযোগ, নাচ-গানের আয়োজন
*. গেটে টাকার জন্য বর-কনেদের বিব্রত করা, বাদানুবাদ
*. বিয়ের দিনে সাজুগুজুআর অতিথি আপ্যায়ন করতে গিয়ে নামায না পড়া
অথচ আল্লাহর দ্বীন হলো একদম সহজ। বিয়েতে কথা তোলার জন্য দরকার হয় একজন ওয়ালী, যিনি হবেন মেয়ের বাবা/অভিভাবক। তিনি মেয়ের মত নিয়ে কথা বলবেন ছেলের সাথে। মুহর ঠিক হবে যার সুন্নাহ হচ্ছে পুরোটাই কনেকে পরিশোধ করে দিবে বর বিয়ের আগেই, তবে যদিবা না পারে, তবে পরে দিতে পারবে যদি কনে তাতে অনুমুতি দেয়। এই মুহর থেকে কোন অংশ সাংসারিক কাজে ব্যয় করতে বলতে পারবে না ছেলে। এই টাকা একান্তই মেয়েটার।
আমাদের দ্বীনে মেয়ের/মেয়েপক্ষের বলতে গেলে কোনই খরচ নেই একটা বিয়েতে। কিন্তু আমাদের সমাজে প্রচলিত যত বোঝা, তার সমস্ত কিছুই আমরা নিয়ে এসেছি অন্য ধর্মের সংস্কৃতি থেকে। একইভাবেএকটা বিয়েতে যত কম খরচ হয়, আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে সেই বিয়ে বেশি পছন্দের। আমরা কি আল্লাহর পছন্দের বান্দাহতে চাই, নাকি সমাজের দাস?
আমাদের আদর্শ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
[৩] "সবচাইতে নিকৃষ্ট খাদ্য হচ্ছে সেই ওয়ালিমাহ এর খাদ্য যেখানে কেবল ধনীরাই নিমন্ত্রন পায়, গরীবেরা নয়"। [সহীহ বুখারী]
[৪] "সবচাইতে উত্তম বিয়ে হচ্ছে সহজতম বিয়ে(মোহরানার দিক থেকে)"।[ইবন মাজাহ, আবু দাউদ]
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশ হচ্ছে দ্বীনদারীর যোগ্যতা দেখে জীবনসঙ্গী বাছাই করে বিয়ে করা। জীবনের সাথী হতে হবে এমন একজন মানুষ যিনি আল্লাহকে ভয় করেন। কোনকিছুতে আল্লাহও তার রাসূলের নির্দেশ পাওয়ামাত্র যিনি মেনে নিবেন, শুধরে নিবেন নিজেকে। সংসার জীবনে কীভাবে আর দ্বিমত হবে, মনোমালিন্য হবে যখন কুরআন আর সুন্নাহ মানতে আগ্রহী দু'জনেই? বরং তারা আজীবন আল্লাহকে ভালোবেসেই নিজেদের আঁকড়ে ধরে থাকবে এই দুনিয়া ছাপিয়ে অনন্ত জীবনের সঙ্গী হবার স্বপ্নে।
আল্লাহর নির্দেশ তো অনুপম, তার পালনকারীও হবেন সেরা মানুষ! হতে পারি আমরা জীবনে অনেক ভুল করেছি, এখন চাইলেই নিজেদের শুধরে নিতে পারি। কিন্তু আল্লাহর নির্দেশকে এড়িয়ে যেতে চাইলে, নিজেদের মতন চলতে চাইলে সেটা কি আল্লাহর দাসত্ব করা হয়? নাকি নিজের নফসের?
আল্লাহ যে রাহমানুর রাহিম, সেইটার অনুধাবন করতে অনেক জ্ঞানী হতে হয়না। এই কঠিন আন্তর্জাতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক অবস্থার সময়েচারপাশে তাকালেই বোঝা যায়। আল্লাহ তার অনন্ত ভালোবাসা আর রাহমাতের হাত তিনি প্রশস্ত করে দেন সবাইকেই। সবাই নিজ নিজ ব্যাখ্যা দিয়ে জীবন পরিচালিত কতে পারে, নিজেকে নিয়ে আত্মতৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে পারে।
কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, আখিরাতে আল্লাহর বিচার যে অনেক সূক্ষ্ম হবে। কেউ ছাড় পাবেনা একটুও। কিছুতেই না। আর সেই ছাড় না পাওয়াটা যে আসলেই সবচাইতে সুন্দরতম জিনিস-- সেই উপলব্ধিটা প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতায় মোহাচ্ছন্ন অমানুষদের আচরণ, কাজ দেখলে অনুভব করি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা আমাদেরকে তাঁর নির্দেশনা মেনে দুনিয়াতে চলার তাওফিক দান করুন, অতীতের ভুলগুলোর তাওবা করে তার পথে ফিরে আসার তাওফিক দিন, আখিরাতের অনন্ত জীবনে মুক্তি পাওয়ার যোগ্য করে দিন। আমিন।
(সংগ্রহ)
প্রশ্ন:
আমদের এলাকায় প্রচলন রয়েছে যে, বিয়ে উপলক্ষে কনের ইজিন নেওয়ার সময় কনের দু’জন কফিল এবং বরের দু’জন কফিল উপস্থিত থাকতে হয়। তাদের উপস্থিতিতে কোনো আলেম সাহেব খুতবা পড়ে নিয়মানুযায়ী ইজিন নেন। বরপক্ষে কফিলের উপস্থিতির কারণ জিজ্ঞাসা করলে তারা বলল, সাক্ষী স্বরূপ তাদের উপস্থিতি জরুরি। জানার বিষয় এই যে, কনের ইজিন নেওয়ার সময় বরপক্ষের উকিলের সাক্ষীস্বরূপ উপস্থিতি শরীয়তসম্মত কি না? ইজিন নেওয়ার সময় বরপক্ষের সাক্ষীর থাকা জরুরি কি না।
উত্তর:
উত্তর:
মেয়ে থেকে বিয়ের ইজিন তথা অনুমতি নেওয়ার জন্য সাক্ষী থাকা অপরিহার্য নয়। একজন ব্যক্তিও মেয়ে থেকে অনুমতি নিয়ে এসে তার পক্ষ থেকে বিয়ের প্রস্তাব বা কবুল করতে পারে। অবশ্য এক্ষেত্রে সাক্ষী রাখা জরুরি নয়, তবে সাক্ষী থাকা ভালো। গায়রে মাহরাম পুরুষদের জন্য সরাসরি মেয়ে থেকে অনুমতি (ইজিন) নিতে যাওয়া বৈধ হবে না। আর ইজনের জন্য পাত্র পক্ষ থাকতেই হবে এমন কোনে আবশ্যকতা নেই।
-আলবাহরুর রায়েক ৩/৮২; রদ্দুল মুহতার ৩/২১
-আলবাহরুর রায়েক ৩/৮২; রদ্দুল মুহতার ৩/২১
প্রশ্ন:
এক মহিলার স্বামী মারা যাওয়ায় সে ইদ্দত পালন করছে। এ অবস্থায় কি সে নাকফুল পরতে পারবে? রঙিন কাপড় পরতে পারবে? চুল আচড়াতে পারবে? একজন বললেন, চুল আচড়ানো নিষেধ। তাহলে এত লম্বা চুল না আচড়ালে তো জট বেঁধে যাবে? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর:
স্বামী মারা গেলে স্ত্রীর জন্য ইদ্দত অবস্থায় সকল প্রকার সাজসজ্জা ত্যাগ করা জরুরি। তাই অলংকার পরা যাবে না। এমনকি নাকফুলও খুলে রাখতে হবে। আর রঙিন সাধারণ ব্যবহৃত কাপড় পরতে পারবে। সাদা কাপড় পরা বাধ্যতামূলক নয়। তবে পুরাতন কাপড় থাকলে নতুন কাপড় পরবে না। তদ্রূপ ঝলমলে কাপড় থেকেও বিরত থাকবে। সৌন্দর্যের উদ্দেশ্যে চুল আচড়াতে পারবে না। তবে চুলের স্বাভাবিকতা রক্ষা করার জন্য আচড়ানোর প্রয়োজন হলে তা পারবে। এটা নিষিদ্ধ নয়।
সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২৩০৪; মুসনাদে আহমদ ৬/৩০২; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৫৫৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৩৩; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৩/২৬৬
সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২৩০৪; মুসনাদে আহমদ ৬/৩০২; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৫৫৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৩৩; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৩/২৬৬
দাম্পত্য মানেই একজন মানুষের সাথে নিজের বাকিটা জীবন কাটানো। যদিও আজকাল ডিভোর্স খুব সহজ একটি ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে, কিন্তু তবুও যতটা সোজা ভাবা হয় বিষয়গুলো আসলে ততটা সহজ নয়। স্ত্রী এমন কেউ নন যে পছন্দ না হলেই বদলে ফেলবেন। বরং সে পরিস্থিতি যেন না হয়, সে কারণে বিয়ের আগেই কিছু খোঁজখবর করে নেয়া ভালো। বিয়েতে কিছু বিষয় একটু ভালো করে জেনে নেবেন। এতে সব শেষে লাভ হবে আপনাদের দুজনেরই।
অতীত সম্পর্কের ব্যাপারেও যথেষ্ট ধারণা রাখুন :-
বিয়ের পর স্ত্রীর অতীত থেকে একজন প্রেমিক বা ভালোবাসার পুরুষ উঠে আসলে নিশ্চয়ই আপনার ভালো লাগবে না? কিন্তু সেই সম্পর্ক যদি "সারপ্রাইজ" হিসাবে দেখা দেয় বিয়ের পর, তাহলে সমস্যা। তাই আগেই জেনে রাখুন স্ত্রীর পুরনো সম্পর্কের ব্যাপারে, যেন ভবিষ্যতে এই ব্যাপারটি আর আপনাদের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করতে না পারে। সবচেয়ে ভাল হয় যে সকল ছেলে বা মেয়ে বিবাহ পূর্ব অবৈধ প্রেমের সম্পর্ক রাখে তাদের পরিহার করা।
বিয়ের পর স্ত্রীর অতীত থেকে একজন প্রেমিক বা ভালোবাসার পুরুষ উঠে আসলে নিশ্চয়ই আপনার ভালো লাগবে না? কিন্তু সেই সম্পর্ক যদি "সারপ্রাইজ" হিসাবে দেখা দেয় বিয়ের পর, তাহলে সমস্যা। তাই আগেই জেনে রাখুন স্ত্রীর পুরনো সম্পর্কের ব্যাপারে, যেন ভবিষ্যতে এই ব্যাপারটি আর আপনাদের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করতে না পারে। সবচেয়ে ভাল হয় যে সকল ছেলে বা মেয়ে বিবাহ পূর্ব অবৈধ প্রেমের সম্পর্ক রাখে তাদের পরিহার করা।
জেনে নিন তাঁর পারিবারিক ইতিহাস :-
শুধু পরিবারের সবার নাম-পরিচয়ই নয়, নিকট আত্মীয়দের পেশা এবং অন্যান্য জরুরী তথ্যগুলো জেনে রাখুন। সাথে এটাও জেনে রাখুন যে কোন বংশানুক্রমিক ব্যাধি আছে কিনা। পরিবারে কোন অপরাধের রেকর্ড বা অন্য কোন অসামাজিক বিষয়ের রেকর্ড আছে কিনা।
শুধু পরিবারের সবার নাম-পরিচয়ই নয়, নিকট আত্মীয়দের পেশা এবং অন্যান্য জরুরী তথ্যগুলো জেনে রাখুন। সাথে এটাও জেনে রাখুন যে কোন বংশানুক্রমিক ব্যাধি আছে কিনা। পরিবারে কোন অপরাধের রেকর্ড বা অন্য কোন অসামাজিক বিষয়ের রেকর্ড আছে কিনা।
পরিবার গঠন ও দাম্পত্য সম্পর্কে তিনি কী ভাবেন :-
বিয়ের আগেই এই বিষয়গুলো পরিষ্কার করে নেয়া দরকার। কারণ সংসার করবেন আপনারা, পরিবার গঠন করবেন আপনারা। এক্ষেত্রে পরস্পরের মূল্যবোধ যদি না মেলে, সেক্ষেত্রে এই লম্বা জীবন পার করাটা খুবই কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে। তাই আগেই জেনে নিন দাম্পত্য সম্পর্কে তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী।
বিয়ের আগেই এই বিষয়গুলো পরিষ্কার করে নেয়া দরকার। কারণ সংসার করবেন আপনারা, পরিবার গঠন করবেন আপনারা। এক্ষেত্রে পরস্পরের মূল্যবোধ যদি না মেলে, সেক্ষেত্রে এই লম্বা জীবন পার করাটা খুবই কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে। তাই আগেই জেনে নিন দাম্পত্য সম্পর্কে তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী।
তাঁর অসুস্থতা সম্পর্কেও জানুন :-
এই বিষয়টি জানার দিকে আমরা খুব একটা মনযোগ দেই না। কিন্তু নারী ও পুরুষ উভয়েরই পরস্পরের মেডিকেল হিস্ট্রি জেনে রাখা উচিত। একসাথে চলার পথে অসুখ বিসুখের আক্রমণ হবেই, জীবনে ঘটতে পারে নানান দুর্ঘটনাও। তাই দুজনেরই শারীরিক যে কোন সমস্যা ও মেডিকেল হিস্ট্রি জেনে রাখা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
এই বিষয়টি জানার দিকে আমরা খুব একটা মনযোগ দেই না। কিন্তু নারী ও পুরুষ উভয়েরই পরস্পরের মেডিকেল হিস্ট্রি জেনে রাখা উচিত। একসাথে চলার পথে অসুখ বিসুখের আক্রমণ হবেই, জীবনে ঘটতে পারে নানান দুর্ঘটনাও। তাই দুজনেরই শারীরিক যে কোন সমস্যা ও মেডিকেল হিস্ট্রি জেনে রাখা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
তাঁর বন্ধুদের চিনে নিন :-
হবু স্ত্রীর বন্ধু বান্ধবদের সাথে পরিচিত হয়ে নিন। এতে খুব পরিষ্কার ধারণা পাবেন স্ত্রীর পছন্দ-অপছন্দ এবং তাঁর পরিচিত সার্কেল সম্পর্কে। এবং জানতে পারবেন এমন অনেক অজানা বিষয় যেগুলো অন্য কোনভাবে জানা সম্ভব না। স্ত্রীর ধ্যান ধারণার মূল্যায়ন করতে সুবিধে হবে আপনার।
হবু স্ত্রীর বন্ধু বান্ধবদের সাথে পরিচিত হয়ে নিন। এতে খুব পরিষ্কার ধারণা পাবেন স্ত্রীর পছন্দ-অপছন্দ এবং তাঁর পরিচিত সার্কেল সম্পর্কে। এবং জানতে পারবেন এমন অনেক অজানা বিষয় যেগুলো অন্য কোনভাবে জানা সম্ভব না। স্ত্রীর ধ্যান ধারণার মূল্যায়ন করতে সুবিধে হবে আপনার।
এবার আসুন আরো বাস্তবতার গভীরে যাই -
আপনার হবু স্ত্রী ধর্মীয় বিষয়ে কতটা জ্ঞান রাখেন এবং সে অনুযায়ী কতটা চলাফেরা করেন সে দিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখুন। শুধু মাত্র এই বিষয়টির প্রতি যদি বিশেষ গুরত্ব দেন তাহলেও আপনি বিয়ের পর অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঝামেলা থেকে অনায়াসেই রেহাই পাবেন !
আল্লাহ্ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ওয়াদা করেছেন যে,বিবাহ করলে তিনি নিজ অনুগ্রহে তাকে ধনী করে দেবেন।
আল্লাহ্ তায়ালা বলেন:
তোমাদের মধ্যকার যারা বিবাহবিহীন আছে এবং দাস দাসীদের মধ্যে যারা নেককার তাদের বিবাহ দিয়ে দাও। যদি তারা অভাবগ্রস্থ থাকে আল্লাহ্ তায়ালা নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে ধনী করে দিবেন।আর আল্লাহ্ তায়ালা প্রাচুর্যময় ও সর্বজ্ঞ।(সুরা নূরঃ ৩২)
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ)বলেছেন,আল্লাহ্ তায়ালা বিবাহ দিতে উৎসাহ দিয়েছেন এবং স্বাধীন ও গোলামদেরকে তার (বিবাহ করতে)আদেশ দিয়েছেন এবং এর বদৌলতে তাদেরকে ধনাঢ্যতার ওয়াদা করেছেন।এরপর তিনি উপরোক্ত আয়াত তেলাওয়াত করলেন।
সাঈদ ইবনে আব্দুল আযীয(রহঃ)হতে বর্ণিত,তিনি বলেন:আমার কাছে খবর এসেছে,হযরত আবু বকর(রাঃ)বলেছেন:আল্লাহ্ তায়ালা তোমাদেরকে বিবাহের ব্যাপারে যে নির্দেশ দিয়েছেন তা পালন কর।তাহলে তিনি তোমাদেরকে ধন্যাঢ্যতার যে ওয়াদা দিয়েছেন তা পূর্ণ করে দেবেন। এরপর তিনি উপরোক্ত আয়াত তেলাওয়াত করলেন।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেছেন: তোমরা বিবাহের মাধ্যমে ধনী হওয়ার রাস্তা খুজে নাও। আল্লাহ্ তায়ালা বলেছেন:
যদি তারা অভাবী থাকে আল্লাহ্ তায়ালা নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে ধনী করে দেবেন। (তাফসীরে ইবনে কাসিরঃ ৬/৫১)
রাসুল (সাঃ) বলেছেন:
তিন ব্যক্তিকে সাহায্য করা আল্লাহ্ তায়ালার জন্য কর্তব্য হয়ে যায়। আল্লাহ্ তায়ালার রাস্তায় জিহাদকারী, চুক্তিবদ্ধ গোলাম যে তার মনিবকে চুক্তি অনুযায়ী সম্পদ আদায় করে মুক্ত হতে চায় এবং ওই বিবাহিত ব্যক্তি যে (বিবাহ করার মাধ্যমে) পবিত্র থাকতে চায়।
(তিরমীজি-১৬৫৫, নাসায়ী-৩২১৮, ৩১২০,সহীহ ইবনে হিব্বান-৪০৩০,বায়হাকীঃসুনানুল কুবরা-১৩৪৫৬,২১৬১২; হাদিসটি হাসান)
অতএব, মুসলিম অমুসলিম সকল অবিবাহিত ভাইবোনদের ভাবার সময় এসেছে; তারাই চিন্তা করবেন যে, তারা কখন বিবাহ করবেন?
ইদানীং পাশ্চাত্য সভ্যতার অনুকরণে বিয়েতে এ্যাংগেজমেন্ট করার রেওয়াজ ব্যাপকতা পেয়েছে। এই আংটি পরানোতে যদি এমন ধরে নেওয়া হয় যে এর মাধ্যমে বিবাহের কথা পাকাপোক্ত হয়ে গেল তবে তা শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম।
কেননা, মুসলিম সমাজ বা শরীয়তে এর কোনো ভিত্তি নেই। আরও নিন্দনীয় ব্যাপার হল, এ আংটি প্রস্তাব দানকারী পুরুষ কোন-কোন হ্মেত্রে নিজ হাতেই কনেকে পরিয়ে দেয়।
অথচ, এ পুরুষ এখনো তার জন্য হালাল হয়নি। এখনো সে মেয়েটির স্বামী হয়নি। কেননা, কেবল বিবাহ চুক্তি সম্পাদিত হবার পরেই তারা স্বামী-স্ত্রী বলে গণ্য হবেন।
আমাদের মুসলিম পরিবারে বিয়েতে কনে / কনে পহ্ম বরকে স্বর্ণের আংটি পরিয়ে দেয়। এই রেওয়াজ বহু বছর ধরে চলে আসছে। শুধু বরকে নয় বরের বোন-জামাইদের / বরের দুলাভাইদেরকেও স্বর্ণের আংটি উপহার দেয়া হয়। আর বিয়েতে বরকে তার অনেক আত্মীয়-স্বজনও স্বর্ণের আংটি উপহার দিয়ে থাকে ।
আমরা কি জানিনা স্বর্ণ ব্যবহার পুরুষদের জন্য হারাম ?
নাকি নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাদিস পড়েও না জানার ভান ধরে এই প্রথা চালিয়ে দিচ্ছি । এর জন্য কি শাস্তি পেতে হবে না ? যারা জেনে শুনে নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আদেশকে অমান্য করছে তারা কি জান্নাতে যেতে পারবে ? তারা কি পুলসিরাত পার হতে পারবে?
পুরুষের জন্য স্বর্ণ ব্যবহার হালাল না কি হারাম কয়েকটি হাদিস থেকে জেনে নিই:
পুরুষের জন্য স্বর্ণ ব্যবহার হালাল না কি হারাম কয়েকটি হাদিস থেকে জেনে নিই:
আবু হুরায়রা (রা:) বলেন, “ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সোনার আংটি পরিধান করতে নিষেধ করেছেন।” (বুখারী- আদাবুয যুফাফ-২১৪)
আলী (রা:) বলেন,“রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে সোনার আংটি পরিধান করতে নিষেধ করেছেন।” (তিরমিযী, আবুদাঊদ, নাসাঈ,ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৪৫৬,‘পোশাক অধ্যায়)
আবু হুরায়রা (রা: বলেন, রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার প্রিয়জনকে (পুরুষকে) আগুনের কড়া বা আংটি পরানো পছন্দ কওে, সে যেন তাকে সোনার কড়া বা আংটি পরায়। (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪৪০১, বাংলা মিশকাত হা/৪২০৫)
নব্বইয়ের দশকে বিটিভিতে ‘ওশিন’ নামে একটি জনপ্রিয় জাপানী সিরিয়াল প্রচারিত হয়। আমরা তখন সম্ভবত অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ি। বান্ধবীরা প্রায়ই এর বিভিন্ন এপিসোড নিয়ে কথা বলতাম। একবার দেখানো হোল ওশিন এমন এক নির্জন জায়গায় গিয়ে চাষবাস করতে শুরু করল যেখানে স্কুলশিক্ষক ছাড়া আর কোন উপযুক্ত পুরুষ নেই মেয়ে বিয়ে দেয়ার জন্য। সে আর কোন উপায় না দেখে মেয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে স্কুলশিক্ষকের কাছে বিয়ে দিয়ে দিল। একটা সন্তান হওয়ার পর মেয়েটির এমন একজনের সাথে পরিচয় হয় যাকে তার মন থেকে পছন্দ হয়। বেশ কিছুদিন চিন্তাভাবনা করার পর সে সিদ্ধান্ত নেয় যে শিক্ষক স্বামীকে ছেড়ে সে ঐ লোকের সাথে সংসার করবে। ব্যাপারটা নিয়ে আমাদের মধ্যে এমনভাবে তোলপাড় সৃষ্টি হোল যেন আমাদের পরিচিত কেউ এমনটা করে বসেছে!
আমার কোন বোন নেই। ভাইদের সাথে বড় হওয়াতেই কি’না জানিনা, আমার রান্নাবাড়া, সাজগোজ, প্রেম বিবাহ বিষয়ে খুব একটা আগ্রহ ছিলনা কখনো। বাস্তব জীবনের চেয়ে বইপত্রের সাথে সম্পর্ক ছিল বেশী। তাই বিবাহ বিষয়ে ধারণা ছিল সিন্ডারেলা মার্কা গল্পে যা লেখা থাকে তেমন, কোনপ্রকারে একবার বিয়ে হয়ে গেলেই “happily ever after”. আমাদের অধিকাংশ মেয়েদের মধ্যেই এই ধরণের ভুল ধারণা কাজ করে। কারণ রূপকথার বইগুলো আমাদের কোনভাবেই জীবনের বাস্তবতার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করেনা। তাই বান্ধবীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী মুষড়ে পড়েছিলাম আমি। এমনটা তো হওয়ার কথা না!
তখন আমার ফিলসফার বান্ধবী শিমু আমাকে খুব ভালো একটা ব্যাখ্যা দিল। সে বল্ল, “ইসলামে বিয়ের বিধানের ওপর এত গুরুত্ব দেয়ার একটা অন্যতম কারণ হোল চরিত্র সংরক্ষণ এবং সামাজিক শৃংখলা বজায় রাখা। আমাদের সমাজে আমরা ইসলামের বিধানের চেয়েও আঞ্চলিকভাবে যা চলে এসেছে তাকে বেশী গুরুত্ব দেই, মানুষ কি বলবে তা ভেবে বেশী চিন্তিত হই। তাই দেখা যায় লোকে কি বলবে ভেবে অনেকে বছরের পর বছর এমন একজনের সাথে আপাতদৃষ্টিতে বৈবাহিক সম্পর্ক বজায় রাখে যেখানে একজনের সাথে আরেকজনের আদৌ কোন সম্পর্ক থাকেনা। দু’জন মানুষ একই বাড়ীতে থাকে, একসাথে খায়, ঘোরে কিন্তু একজন আরেকজনকে সহ্য করতে পারেনা। কেউ কেউ সন্তানদের কথা ভেবে নিজেকে বঞ্চিত করে, চালিয়ে যায় সুখে থাকার নাটক। যারা অতটা দৃঢ় মানসিকতাসম্পন্ন নয়, তারা ডুবে যায় ব্যাভিচার বা অনৈতিক কার্যকলাপের আবর্তে। সেক্ষেত্রে তো বিয়ের মূল উদ্দেশ্যই ব্যহত হচ্ছে! তার চেয়ে কি এটা ভালো নয় যে তারা যেভাবে নিজেদের চরিত্র সংরক্ষণ করতে পারবে সেভাবেই সিদ্ধান্ত নেবে? তার মানে এই নয় যে তারা যে বৈবাহিক সম্পর্ক আছে তাকে সহজভাবে নেবে। এর মানে হোল তারা সর্বোত চেষ্টা করে দেখবে এই সম্পর্ক কার্যকর করা যার কি’না আর তারপর ব্যার্থ্ হলেই কেবল আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেবে।
তখন আমার ফিলসফার বান্ধবী শিমু আমাকে খুব ভালো একটা ব্যাখ্যা দিল। সে বল্ল, “ইসলামে বিয়ের বিধানের ওপর এত গুরুত্ব দেয়ার একটা অন্যতম কারণ হোল চরিত্র সংরক্ষণ এবং সামাজিক শৃংখলা বজায় রাখা। আমাদের সমাজে আমরা ইসলামের বিধানের চেয়েও আঞ্চলিকভাবে যা চলে এসেছে তাকে বেশী গুরুত্ব দেই, মানুষ কি বলবে তা ভেবে বেশী চিন্তিত হই। তাই দেখা যায় লোকে কি বলবে ভেবে অনেকে বছরের পর বছর এমন একজনের সাথে আপাতদৃষ্টিতে বৈবাহিক সম্পর্ক বজায় রাখে যেখানে একজনের সাথে আরেকজনের আদৌ কোন সম্পর্ক থাকেনা। দু’জন মানুষ একই বাড়ীতে থাকে, একসাথে খায়, ঘোরে কিন্তু একজন আরেকজনকে সহ্য করতে পারেনা। কেউ কেউ সন্তানদের কথা ভেবে নিজেকে বঞ্চিত করে, চালিয়ে যায় সুখে থাকার নাটক। যারা অতটা দৃঢ় মানসিকতাসম্পন্ন নয়, তারা ডুবে যায় ব্যাভিচার বা অনৈতিক কার্যকলাপের আবর্তে। সেক্ষেত্রে তো বিয়ের মূল উদ্দেশ্যই ব্যহত হচ্ছে! তার চেয়ে কি এটা ভালো নয় যে তারা যেভাবে নিজেদের চরিত্র সংরক্ষণ করতে পারবে সেভাবেই সিদ্ধান্ত নেবে? তার মানে এই নয় যে তারা যে বৈবাহিক সম্পর্ক আছে তাকে সহজভাবে নেবে। এর মানে হোল তারা সর্বোত চেষ্টা করে দেখবে এই সম্পর্ক কার্যকর করা যার কি’না আর তারপর ব্যার্থ্ হলেই কেবল আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেবে।
“এটা অবশ্যই খুব দুঃখজনক অবস্থা যদি কোন ব্যাক্তি সঠিক মানুষটিকে খুঁজে পান তাঁর বিয়ের পর। এজন্যই হয়ত পর্দার ওপর এতখানি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, এই দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য। কিন্তু একইসাথে বিবাহিত ব্যাক্তির জন্য ব্যাভিচারের শাস্তি নির্ধারন করা হয়েছে মৃত্যুদন্ড যেখানে অবিবাহিত ব্যাক্তির জন্য শাস্তি অপেক্ষাকৃত কম। যেহেতু অবিবাহিত নারীপুরুষের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা সংযমের অভাবের কারণে ঘটতে পারে। কিন্তু বিবাহিত নারীপুরুষদের ক্ষেত্রে সীমালংঘনই মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। পুরুষদের জন্য একাধিক বিয়ের সুযোগ রাখা হয়েছে যদিও আল্লাহ বলেছেন এক বিয়েই তাঁর কাছে অধিক পছন্দনীয় এবং একাধিক বিয়ের শর্ত এত কঠিন করে দেয়া হয়েছে যে চিন্তাশীল ব্যাক্তি মা্ত্রেই ভয় পাবে। কিন্তু এর পেছনে উদ্দেশ্য এই যে, যদি এই দুর্ঘটনা ঘটেই যায়, তাহলে ব্যাভিচারের পরিবর্তে সঠিক পথটিই যেন মানুষ বেছে নেয়।
“সুতরাং, আমাদের সবসময় আল্লাহর কাছে দোয়া করা উচিত যেন আল্লাহ আমাদের এমন সঙ্গী মিলিয়ে দেন যার সাথে আমাদের সম্পর্ক হবে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য- ঐ সাত ব্যাক্তির একজনের মত যারা কেয়ামতের দিন আরশের নীচে ছায়া পাবে যখন বারোটি সূর্য ঠিক মাথার ওপর অবস্থান করবে। আল্লাহ যেন আমাদের জন্য বৈবাহিক জীবন এবং দায়িত্ব সহজ এবং আনন্দময় করে দেন যাতে ইসলামের ওপর অবস্থান করা এবং চরিত্র সংরক্ষণ করা আমাদের জন্য সহজ হয়ে যায়”।
শিমুর কথায় আমার যে শুধু এই ব্যাপারে ধারণা স্পষ্ট হোল তাই নয়, আমি বুঝতে পারলাম যে আমরা অনেক ফালতু ব্যাপারে দোয়া করতে করতে অস্থির হয়ে যাই, অথচ জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারগুলোতে আল্লাহর সাহায্য চাইতে ভুলে যাই। মজার ব্যাপার হোল, আমি যখন আমার ছাত্রীদের বলতাম সঠিক বিয়ের জন্য দোয়া করতে, তারা খুব লজ্জা লজ্জা মুখ করে বলত, “এটা কি বললেন ম্যাডাম? এ’রকম লজ্জাজনক বিষয়ে কি আল্লাহকে বলা যায়?” অথচ ভুরি ভুরি ছেলেমেয়ে দেখেছি যারা বাবামাকে লুকিয়ে প্রেম করে আর সেই প্রেমে সাফল্য আসার জন্য আল্লাহকে ডাকতে ডাকতে মহাবিশ্ব ফেঁড়ে ফেলার জোগাড়!
তাদের একজনকে বলেছিলাম, “তুমি আল্লাহকে বল যেটা তোমার জন্য ভালো হবে, আল্লাহ যেন সেটাই তোমাকে দেন। তুমি নিজে নির্দিষ্ট করে দিয়োনা তুমি কি চাও। কারণ আমরা কেউ জানিনা আমরা যা চাই তাতে ভালো আছে না মন্দ”। কিন্তু সে নাছোড়বান্দা। শেষমেশ বহুবছর পর, বহু নিশীথ রজনী অশ্রুব্যাকুল হয়ে দোয়া করার পর আচমকা কিভাবে যেন সব বাঁধা পরিষ্কার হয়ে গেল। তার বিয়ে হয়ে গেল নিজের পছন্দমত। সে এখনো প্রতিরাতে ব্যাকুল হয়ে কাঁদে, “আমি নাহয় ভুল করে তাই চেয়েছি যা আমার জন্য ভালো নয়, কিন্তু তুমি কেন আমায় তা দিলে আল্লাহ?” আপনারাই বলুন, আল্লাহ এখন কি করবেন?!
আরেকবার এক ভাইয়ের বৌ মারা গেলেন হঠাৎ করে। বাচ্চাদের নিয়ে বেচারা হিমশিম খাচ্ছেন। ভাইয়ের বয়স খুব বেশী না। আমরা বললাম, কত বিধবা মেয়ে আছে যাদের কোন অভিভাবক নেই, তাদের একজনকে যদি উনি বিয়ে করেন তাহলে দু’জনেরই উপকার হতে পারে। স্বামী বা স্ত্রী মারা গেলে অন্যজনের সব প্রয়োজন বা চাহিদা তো আর অদৃশ্য হয়ে যায়না! সংসার চালাতে হবে, সন্তানদের দেখাশোনা করতে হবে, কোনটা বাদ দেয়ার মত? একজনের জীবনাবসান হয়েছে বলে তো আরেকজন জীবিত মানুষের জীবনের ইতি টেনে দেয়া যায়না। এর মানে এই নয় যে তাদের সম্পর্কে কোন ঘাটতি ছিল। বরং কেউ যদি কারো ব্যাপারে সত্যিই ভাবে তাহলে সে চাইবে সে মারা গেলে যেন তার সঙ্গী জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ না হয়ে সুখী হয়। কিন্তু আত্মীয় স্বজনরা অনেকসময় ইসলামের তোয়াক্কা না করে চলতি প্রথা অনুসারে চিন্তা করেন। বিধবা বা মৃতদার বিয়ে করবেন এটা তারা কিছুতেই মেনে নিতে পারেন না। আমার এক বন্ধু ক্ষুব্ধ হয়ে বলেছিলেন, “তারা (আত্মীয়স্বজনরা) বরং এ’টাই ভালো মনে করে যে যাদের স্বামী বা স্ত্রী মারা গেছেন তারা অবৈধ কিছু করুক, ওটা হয়ত লোকে দেখতে পাবেনা। কিন্তু বৈধ উপায়ে বিয়ে করলে যে লোকে ছি ছি করবে সেটা তারা কিছুতেই সহ্য করতে রাজী না”।
আমাদের সমাজে হয়ত অভাব, হয়ত লোভ থেকে এখন আরেকটা প্রথা প্রচলিত হয়েছে। বিয়ে করে বৌ রেখে বছরের পর বছর বিদেশ থাকা। কেউ টাকার জন্য, কেউ সিটিজেনশিপের জন্য, কেউ একটা স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার জন্য, কেউ পরিবারের প্রয়োজনে। আবার অনেকে বাড়ীতে বৌ রেখে শহরে পড়ে থাকেন মাসের পর মাস। অথচ আল্লাহ বলেছেন স্বামী স্ত্রী একজন আরেকজনের পরিচ্ছদস্বরূপ। পোশাক যেভাবে আমাদের শীতগ্রীষ্ম, রোদবৃষ্টি, পোকামাকড় থেকে রক্ষা করে; আমাদের সৌন্দর্য বর্ধিত করে, অসৌন্দর্য ঢেকে রাখে- স্বামী স্ত্রী সেভাবেই একজন আরেকজনকে সাহায্য সহযোগিতা, আলাপ পরামর্শ, সাহস বা সান্তনা দিয়ে পরস্পরকে পরিপূরণ করবে। কিন্তু দু’জন যদি বছরের পর বছর পরস্পরকে না’ই দেখে, শুধু ফোনে কথা বলে আর আকাশপাতাল কল্পনা করে কি চরিত্র সংরক্ষণ করা যায়? এর ফলশ্রুতিতে আমাদের সমাজে পরকীয়াসহ নানাধরণের বিশৃংখলা দেখা যাচ্ছে। মানুষ তাদের প্রয়োজন নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যার্থ হচ্ছে, আবার এই অবৈধ কার্যকলাপ ঢাকতে গিয়ে আরো বড় পাপের মধ্যে জড়িয়ে যাচ্ছে। বিদেশেও যে ভাইরা সবসময় নিরাপদ থাকেন, ব্যাপারটা তেমনও নয়। বিদেশের মাটিতে মানুষের মন প্রায়ই খারাপ থাকে, তখন প্রলোভন থেকে নিজেকে বিরত রাখা স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। অনেকেই পা পিছলে পড়ে যান পংকিলতার পিচ্ছিল পথে। উমার (রা) মুসলিম সৈনিকদের জন্য প্রতি চারমাসে বাড়ী ফিরে আসা বাধ্যতামূলক করে দিয়েছিলেন এই ধরণের সামাজিক বিপর্যয় রোধ করার জন্য। আমাদের ভাইদের ক’জন প্রতি চারমাস অন্তর স্ত্রীর সাথে সময় কাটাতে আসেন বা আসতে পারেন? পরিবারের প্রয়োজনকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে অনেকেই নিজের ইচ্ছা অনিচ্ছা সাধ আহ্লাদ কোরবানী করে দেন বছরের পর বছর। কিন্তু তাদের আত্মীয়স্বজন মনে করেন, বিদেশে তো টাকা আকাশে বাতাসে ওড়ে, তার কাছে নিশ্চয়ই আরো টাকা আছে কিন্তু সে আমাদের দিচ্ছেনা। এই পরিস্থিতিতে দেশে ফিরে আসা কঠিন বৈকি! আর দেশে যারা দূরে থেকে কাজ করেন তাদের স্ত্রীদের অনেক সময় বাবামা আসতে দেন না, হয়ত এই মনে করে যে তাহলে ছেলে আর বাড়ীতে টাকা পাঠাবে না! তাই দেশে থেকেও তারা চরিত্র সংরক্ষণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত!
পারিবারিক বা সামাজিক প্রয়োজনে আজকাল আমাদের দেশে বিপুল সংখ্যক মহিলা সংসারের পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রেও কাজ করছেন। কিন্তু আমাদের সামাজিক কাঠামো এখনো তাদের এই উভয় দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করার উপযোগী হয়ে ওঠেনি। কাজের লোকের সাহায্য ছাড়া সংসার চালানোর মত গৃহ, রান্নাঘর, গ্যাস, ইলেকট্রিসিটি, পানির ব্যাবস্থা, পারিবারিক কাঠামো, বাচ্চাদের জন্য সুব্যাবস্থা এখনো সুদূরপরাহত। অনেক মহিলারাই কাজ করেন পুরুষপরিবেষ্টিত পরিমন্ডলে যেখানে নারী বলেই তাদের প্রতি সৎমাসুলভ আচরণ করা হয়। অনেকেই সারাদিন এ’ধরণের কষ্টকর পরিস্থিতি থেকে একটু শান্তির আশায় ঘরে ফেরেন। কিন্তু অধিকাংশ মহিলা যৌথ পরিবারে থাকেন বিধায় ঘরে ফিরেও পারিবারিক দায়িত্ব থেকে নিষ্কৃতি মিলেনা। শ্বাশুড়ীকেন্দ্রিক পরিবারে শ্বাশুড়ী বিবেকবতী না হলে মহিলাদের ২৪ ঘন্টাই কাটে এক দুর্বিসহ পরিস্থিতিতে। তদুপরি স্বামীও যদি তাদের সময় বা সাহচর্য না দেন, যেটা যৌথ পরিবারে অনেক সময়ই সম্ভব হয়ে ওঠেনা, তখন তাদের দিক হারানোর সম্ভাবনা প্রবল হয়ে ওঠে। এটা শুধু নারীদের ক্ষেত্রেই নয়, যে পুরুষ সারাদিন চাকরী করে বাড়ী ফিরে দেখেন বৌ শ্বশুর শ্বাশুড়ীর সেবায় নিয়োজিত সম্পূর্ণ সময়, তাঁর সাথে দু’দন্ড বসে কথা বলার সময় নেই স্ত্রীর, তিনিও একই ভাবে পথ হারাতে পারেন।
একবার ইউনিভার্সিটিতে এক ক্লাসে ছাত্রী কথাপ্রসঙ্গে বলছিল, “ম্যাডাম, আমি ইউনিভার্সিটি আসি বলে সবদিন সকালে বাসার সবার জন্য নাস্তা বানাতে পারিনা। তাই শ্বাশুড়ী আমাকে নাস্তা খেতে দেননা। আমি এখন পাঁচমাসের প্রেগ্ন্যান্ট। প্রতিদিন খালিপেটে ক্লাসে এসে বমি করি। বাসায় গিয়ে রান্না করতে পারলে খাবার জোটে নতুবা নয়। আমার শ্বাশুড়ীর যদি ইসলাম সম্পর্কে কোন জ্ঞান থাকত তাহলে কি উনি এ’রকম করতে পারতেন?” সে প্রথমে যে বর্ণনা দিল তাতে আমার মাথা ভোঁ ভোঁ করে ঘুরতে শুরু করল- যে মহিলা তার হবু নাতি বা নাতনীর মায়ের সাথে এমন আচরণ করছেন, তিনি কি ভাবছেন তিনি এই মেয়েটাকে প্রতিদিন কি বিপদের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছেন? নূন্যতম মানবতাবঞ্চিত এই মেয়েটা যদি কারো কাছ থেকে ন্যূনতম মানবিক ব্যাবহার পায়, তার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে বা তার সাথে পালায়, তাকে কি খুব দোষ দেয়া যাবে? কি নিশ্চয়তা আছে যে এ’রকম মানসিক তোলপাড়ের মধ্যে সে কোন সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে? তার স্বামী কি ধরেই নিয়েছেন যে একটুকরা কাগজে দু’জনে সই করেছে বলে তিনি এবং তাঁর পরিবারের সকলে এই মেয়েটাই সাথে এমন অমানবিক আচরণ করতে পারেবন অথচ সে তাদের প্রতি অনুরক্ত থাকতে বাধ্য?!
এক বন্ধুকে একবার বলেছিলাম, “ভাই আপনি এত ভালো মানুষ, এত গুরুত্বপূর্ণ একটা পজিশনে চাকরী করেন, অথচ একটা মেয়েকে নিয়ে আপনাকে ঘুরতে দেখেছে অনেকেই। আপনি তাকে বিয়ে করুন বা বিয়ে পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। কিন্তু আপনি যা করছেন তা আপনিও জানেন অন্যায়, কিন্তু তার চেয়েও বড় সমস্যা আপনার মত একজন অসাধারন মানুষ যখন এই কাজটা করছেন তখন অন্যদের আমরা আর কিছু বলতে পারছিনা যাদের বলা প্রয়োজন”। উনি কিছুক্ষণ কিভাবে বুঝিয়ে বলবেন চিন্তা করলেন। তারপর বললেন, “আমাদের বাড়ীতে সব ভাইবোন পালিয়ে বিয়ে করেছে কারণ আমাদের বাবামা ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ এবং তারা নানাধরনের বাহানা দিয়ে আমাদের সময়মত বিয়ের ব্যাবস্থা করেন না। আমি একটু আধটু ইসলাম বিষয়ে পড়াশোনা করেছি। তাতে লাভ হয়েছে এই যে আমি পালাইনি, বাবামা’র সব আকাঙ্ক্ষা পূরন করেছি, বাড়ী বানিয়ে দিয়েছি, বোনদের বিয়ে দিয়েছি, টাকাপয়সা দিচ্ছি প্রতিমাসে- কিন্তু তারা আমাকে বিয়ে করতে দিতে রাজী নন। যদি বিয়ের পর এভাবে ওদের জন্য খরচ করতে না পারি! আমার চল্লিশ হতে খুব একটা দেরী নেই। আর চল্লিশের পর আমার আর বিয়ে করার প্রয়োজনই নেই। কিন্তু বাবামাকে কে বোঝাবে? আমি এখন আমার ‘ভুলের’ মাসুল দিচ্ছি। দুনিয়াতেও গুনাহ কামাচ্ছি, আখেরাতেও এর প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে।
“এ’ তো গেল বাবামা’র কথা। যে মেয়ের আমাকে পছন্দ তাকে বললাম, চল আমরা ছোটখাট করে বিয়ে করে ফেলি। সে তখন বেঁকে বসল। কমপক্ষে দশভরি গহনা আর বড় অনুষ্ঠান না করলে সে বিয়েই করবেনা। আপনি তো গোল্ডের দাম জানেন নিশ্চয়ই। বলেন তো আরো কত বছর চাকরী করলে আমার দশ ভরি গোল্ড কেনার সামর্থ্য হবে?” ওনাকে বিচার করা আমার উদ্দেশ্য ছিলনা। তাই চুপ করে রইলাম।
ছোটবেলায় এক ভদ্রমহিলার কথা শুনেছিলাম যিনি বোনকে তালাক দিইয়ে বোনের স্বামীকে বিয়ে করেছিলেন। বাংলাদেশে ফেরার পর এক পরিবারের সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে। পরে জানতে পারলাম এই সেই পরিবার যার কথা আবুধাবীতে বসে শুনেছিলাম। একদিন ওনার বাবার সাথে কথা প্রসঙ্গে জানতে পারলাম বড় বোন স্বামীকে দিয়ে ছোটবোনের আনানেয়া থেকে শুরু করে সব কাজ করাতেন। অথচ হাদীসে স্পষ্ট বলা হয়েছে এই সম্পর্কগুলো থেকে ততটাই সাবধানতা অবলম্বন করতে যেভাবে আগুন থেকে নিরাপদ থাকার চেষ্টা করা হয়। যেহেতু এক্ষেত্রে পর্দা বজায় রাখা অনেক কঠিন, এখানে সাবধানতাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা ব্যাবস্থা। কিন্তু আমাদের দেশে প্রায়ই দেখা যায় শ্যালিকা বা দেবরদের সাথে দুলাভাই ভাবীদের আজেবাজে দুষ্টুমী করতে, পাশে বসতে বা গায়ে হাত দিয়ে কথা বলতে! এই বিষয়ে কেউ কিছু বললে আমরা খুব রেগে যাই বা অপমানিত বোধ করি। আমরা মনে করি এই বিষয়ে এভাবে ভাবাটা নোংরা মানসিকতার পরিচায়ক। কিন্তু এই কথাটা আমাদের মাথায় খেলেনা যে আমরা সবাই মানুষ, তাই কেউ মানবীয় দুর্বলতার উর্ধ্বে নই। আপনজনদের নিরাপত্তার জন্য এক্ষেত্রে আমাদের আল্লাহর নির্দেশিত পথ অনুসরন করাটাই শ্রেয় কারণ সৃষ্টিকর্তাই ভালো জানেন সৃষ্টবস্তুর গুনাগুন সম্পর্কে।
বিয়ে কেবল একটা মৌখিক সম্মতি, একটুকরো কাগজ, একটা সামাজিক অনুষ্ঠান- যতক্ষণ না উভয় ব্যাক্তি তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকে এবং এই সম্পর্ককে স্থায়ী করার জন্য বুঝেশুনে অগ্রসর হয়। নাটক সিনেমা দেখে আমাদের একটা ধারণা হয়ে যায় যে বিয়ে হোল সব সমস্যার শেষ আর সুখের শুরু। কিন্তু ব্যাপারটা মোটেও তেমন নয়। ব্যাপারটা এমনও নয় যে দেখতে ভালো হলে, সুন্দর জামাকাপর গহনা মেকাপ পরে সেজেগুজে থাকলেই বিয়ে সুখের হয়। দু’জন মানুষ সম্পূর্ণ আলাদা দুই পরিবেশ, দু’টো পৃথক পারিবারিক পরিমন্ডল থেকে এসে “happily ever after” টিকে যাওয়া এতটা সহজ নয়। এর জন্য দু’জনকেই প্রতিদিন প্রতিটা মূহূর্ত চেষ্টা করতে হবে একে অপরকে বোঝার, পরস্পরের সুবিধা অসুবিধা রুচি পছন্দ জানার এবং তাকে সম্মান করার, পরস্পরের পরিবারকে আপন করে নেয়ার। দু’জনকেই সাহায্য করতে হবে একে অপরকে আলাপ আলোচনা সহযোগিতা করে। সবচেয়ে বড় কথা প্রেম সম্পর্কে নাটক সিনেমার বানোয়াট ধারণা ঝেড়ে ফেলে বুঝতে হবে সবার আগে এটা একটা খুব ভালো বন্ধুত্ব- যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে সম্প্রীতি আর সম্মানের মজবুত ভিত্তির ওপর, যা পাকা চুল আর ঝুলে পড়া চামড়ায় পরিবর্তিত হয়ে যায়না।
লিখেছেনঃ রেহনুমা বিনত আনিস
প্রশ্ন:
আমাদের সমাজে নারীদেরকে স্বামীর মৃত্যুর পর তার জন্য শোক প্রকাশার্থে সাজসজ্জা থেকে বিরত থাকতে দেখা যায়। তাছাড়া বিধবা নারীদের সাদা কাপড় পরিধান করার প্রচলন প্রায় সব অঞ্চলেই আছে। অনেকে এটিকে শুধু একটি সামাজিক প্রথা মনে করে থাকে। আবার অনেকে এটিকে শরীয়তের বিধান মনে করলেও এ ব্যাপারে এতটা যত্নশীল নয়। তদ্রূপ অনেকে এসব বিষয়কে কুসংস্কার বলেও মন্তব্য করে থাকে।
জানার বিষয় হল, আসলে এ বিষয়ে শরীয়তের নির্দেশনা কী? স্বামীর মৃত্যুর পর একজন স্ত্রীর এ ব্যাপারে করণীয় কী?
উত্তর:
স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রীর ইদ্দতকালীন সময় (অন্তঃসত্ত্বা হলে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত অন্যথায় ৪ মাস ১০ দিন) সব ধরনের সাজসজ্জা থেকে বিরত থাকা ওয়াজিব বিধান।
সহীহ বুখারীতে উম্মে হাবীবা রা. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ এবং পরকালে বিশ্বাসী কোনো নারীর জন্য তার স্বামী ব্যতীত অন্য কারো মৃত্যুতে তিনদিনের বেশি সময় হিদাদ (শোক করা ও সাজসজ্জা থেকে বিরত থাকা) বৈধ নয়। আর স্বামীর মৃত্যুতে ৪ মাস ১০ দিন হিদাদ পালন করবে।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৫৩৩৪
উম্মে সালামা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে স্ত্রী লোকের স্বামী মৃত্যুবরণ করে সে যেন ইদ্দতকালীন সময়ে রঙিন এবং কারুকার্যমণ্ডিত কাপড় ও অলংকার পরিধান না করে। আর সে যেন খিযাব ও সুরমা ব্যবহার না করে।-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২২৯৮
আল্লামা কুরতুবী রাহ. তার বিখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ ‘আলজামে লিআহকামিল কুরআন’ও ইদ্দত সংক্রান্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় লেখেন, হিদাদ পালনের অর্থ হল, মহিলা তার ইদ্দতকালীন সুগন্ধি, সুরমা, মেহেদি,অলঙ্কারাদিসহ পোশাক-আশাকের ক্ষেত্রে যাবতীয় সাজসজ্জা ত্যাগ করবে। -আল জামে’ লিআহকামিল কুরআন, কুরতুবী ৩/১১৮
সুতরাং কোনো মহিলার স্বামী মারা যাওয়ার পর ৪ মাস ১০ দিন অথবা অন্তঃসত্ত্বা হলে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত যে কোনো ধরনের সাজসজ্জা যা উৎসবাদিতে পরা হয় এমন চাকচিক্যপূর্ণ পোশাক পরিধান করা,সুগন্ধি ও অন্যান্য সাজসজ্জার প্রসাধনী ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। তদ্রƒপ মেহেদি লাগানো, সুরমা দেওয়া থেকেও বিরত থাকা আবশ্যক। অবশ্য ব্যবহৃত রঙিন কাপড় যদি চাকচিক্যপূর্ণ না হয় তাহলে তা পরিধান করতে কোনো অসুবিধা নেই।
ইদ্দত অবস্থায় সাদা কাপড় পরা আবশ্যক নয়। বরং সাদা কাপড় পরিধান করাকে জরুরি মনে করা ঠিক নয়।
প্রকাশ থাকে যে, ইদ্দত অবস্থায় মহিলার জন্য সাজগোজ ত্যাগ করার বিধান একাধিক হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। এ ব্যাপারে হাদীসে অত্যন্ত গুরুত্ব এসেছে। এটি শরীয়তের গুরুত্বপূর্ণ বিধান। সুতরাং একে সামাজিক প্রথা বা কুসংস্কার মনে করা অন্যায়। বরং আল্লাহ এবং পরকালে বিশ্বাসী সকল মুসলমানের উচিত উক্ত বিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া। নারীদের কর্তব্য উক্ত বিধান পালনে যত্নশীল হওয়া।
-আলমাবসূত, সারাখসী ৬/৫৯; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৫৩০-৫৩২; মিরকাতুল মাফাতীহ ৬/৪৫২; তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ১/২৩১; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩৩০; ফাতহুল বারী ৯/৪০১, ৩৯৫
সহবাসের পর সাথে সাথে গোসল করার ৫টি জরুরি রহস্য!
প্রথম রহস্য : স্ত্রী সহবাসের পর সকলকে গোসল করতে হবে। এটি খুব জরুরী ও ইসলামি বিধান অনুযায়ী ফরজ কাজ। গোসলের সময় সারা শরীরে পানি ঢালবে। সামান্য স্থানও যেনো শুকনা না থাকে। কেননা, সহবাসের সময় যে বীর্যপাত হয়ে থাকে তা সমস্ত শরীর থেকেই হয়ে থাকে। বীর্য শরীরের মূল উপকরণ যা সমস্ত শরীর হতে নিসৃত হয়ে কোমরের পথা দিয়ে এসে যৌনাঙ্গে দিয়ে বের হয়। এ বীর্য বের হওয়ার দ্বারা শরীর অনেক দুর্বল হয়ে যায়। আর যেহেতু বীর্য শরীরের সকল অঙ্গ থেকে এসে থাকে সেহেতু গোসলের সময় সমস্ত শরীর পানি দ্বারা ধৌত করতে হবে। সামান্য স্থান শুকনো থাকলেও পূর্ণাঙ্গ গোসল হবে না। আর পুর্ণাঙ্গ গোসল না হলে সে পবিত্রও হবে না। [বেহেশতি জেওর]
দ্বিতীয় রহস্য : সহবাসের দ্বারা শরীরে দুর্বলতা, ক্লান্তি, অলসতার ভাব দেখা দেয়। আর গোসলের দ্বারা এসব দূর হয়ে যায়। সে সাথে অন্তরে শক্তি, প্রফুলতা, আগ্রহ ও উদ্দিপনা সৃষ্টি হয়। হযরত আবু গিফারী রা. বলেন- সহবাসের পর গোসল করলে মনের হালত এমন হয় যেন মাথা হতে পাহাড়সম ভার দূর হয়ে গেল। [বেহেশতি জেওর]
তৃতীয় রহস্য : সহবাসের পর মানুষের অন্তরে একপ্রকার অস্থিরতা ও সংকীর্ণতা থাকে। আর এটা কেবল গোসলের দ্বারাই দূর হয়ে থাকে। বিনা গোসলে খাওয়া-দাওয়া করা ও অধিক সময় অবস্থান করার দ্বারা দারিদ্রতা দেখা দেয়। [রুহানি এলাজ]
চতুর্থ রহস্য : অভিজ্ঞ হাকিমগণ বলেন, সহবাসের পর গোসল করলে সহবাসের ক্ষয়কৃত শক্তি ও উদ্দিপনা পুনরায় ফিরে আসে এবং দুর্বলতা দূর হয়ে যায়। সহবাসের পর গোসল করাশরীর ও আত্মার জন্য খুবই উপকারী। পক্ষান্তরে সহবাসের পর গোসল না করে অপবিত্র অবস্থায় থাকার কারণে শরীর ও আত্মার অনেক ক্ষতি হয়ে যায়। [রুহানি এলাজ]
পঞ্চম রহস্য : সহবাসের দ্বারা বীর্যপাত হলে শরীরের সমস্ত ছিদ্র খুলে যায়। এতে সে ছিদ্র দিয়ে ঘাম বের হওয়ার সাথে সাথে শরীরের দুর্গন্ধযুক্ত সারাংশও বের হতে থাকে। আর সে দুর্গন্ধযুক্ত সারাংশ লোক ও ছিদ্রের মুখে এসে থেমে যায়। সুতরাং গোসলের মাধ্যমে সমস্ত শরীর পরিষ্কার করা না হলে রোগ হওয়ার সম্ভবনা থাকে। সেহেতু সহবাসের পর গোসল করা সকলের জন্যই আবশ্যক। আর তা না সহবাসে হোক আর স্বপ্নদোষে হোক কিংবা অন্য কোনো পদ্ধতিতে বীর্যপাত হয়ে থাকুক। [বেহেশতি জেওর]
-মাওলানা মিরাজ রহমান
বর্তমানে দেখা যায়, বরপক্ষের না বলার পরও কনেপক্ষ ফার্নিচার ইত্যাদি দিয়ে থাকে। তাই জানার বিষয় হল,এসব আসবাবপত্র গ্রহণ করা জায়েয হবে কি?
উত্তর:
বরপক্ষের দাবি কিংবা সামাজিক চাপ ছাড়া কনেপক্ষের লোকজন স্বতঃস্ফূর্তভাবে কনের ঘরে ব্যবহারের জন্য কোনো আসবাবপত্র দিলে তা গ্রহণ করা যাবে।
তবে বরপক্ষের দাবি কিংবা চাপের কারণে অথবা সামাজিক প্রচলনের কারণে বাধ্য হয়ে কোনো কিছু দিলে তা গ্রহণ করা জায়েয হবে না।
-মুসনাদে আহমদ, হাদীস ১৫৪৮৮; ফিকহুন নাওয়াযিল ৩/৩৪৮-৩৫৩
ইসলামে বিবাহ - শাদী অনেক সহজ আর প্রচলিত
সমাজ ব্যবস্থা বা সামাজিকতা বিবাহ - শাদীকে আজ
কঠিন
করে ফেলেছে যার ফলে বিয়ে করতে বিলম্ব
হওয়ায় যুবসমাজ নানা প্রকার সামাজিক অন্য ায় ও ব্যভিচারে লিপ্ত ।
সমাজ ব্যবস্থা বা সামাজিকতা বিবাহ - শাদীকে আজ
কঠিন
করে ফেলেছে যার ফলে বিয়ে করতে বিলম্ব
হওয়ায় যুবসমাজ নানা প্রকার সামাজিক অন্য ায় ও ব্যভিচারে লিপ্ত ।
আজকাল দেখা যায় , বিয়ের দেনমোহর ধার্য
করতে গিয়ে বর ও কনে পক্ষের মধ্যে দর
কষাকষি শুরু হয় এমনকি বিয়ে পর্যন্ত ভেঙ্গে যায় ।
আর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় , বরের
সামর্থ্যের বাইরে দেনমোহর ধার্য করা হয় যা কিনা
বরের উপর এক প্রকার জুলুম । অথচ হাদীস
থেকে আমরা জানতে পারি যে , রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময় বিবাহ - শাদী অনেক সহজ
ছিল ।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ তা ' আলা বলেন ,
হে মানব , আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক
নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে
বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি , যাতে
তোমরা পরস্পরে পরিচিতি হও । নিশ্চয় আল্লাহর কাছে
সে - ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার ।
নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ , সবকিছুর খবর রাখেন । [ সূরা
আল - হুজুরাতঃ ১৩ ]
মুমিনদেরকে বলুন , তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত
রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে ।
এতে তাদেরজন্য খুব পবিত্রতা আছে । নিশ্চয় তারা যা
করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন । [ সূরা আন - নুরঃ৩০ ]
ঈমানদার নারীদেরকে বলুন , তারা যেন তাদের
দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের
হেফাযত করে । তারাযেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান , তা
ছাড়া তাদেরসৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা
যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে
রাখে এবংতারা যেন তাদের স্বামী , পিতা , শ্বশুর ,
পুত্র , স্বামীর পুত্র , ভ্রাতা , ভ্রাতুস্পুত্র , ভগ্নিপুত্র ,
স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী , যৌনকামনামুক্ত
পুরুষ , ও বালক , যারা নারীদের গোপন অঙ্গ
সম্পর্কে অজ্ঞ , তাদের ব্যতীত কারো আছে
তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে , তারা যেন
তাদের গোপন সাজ - সজ্জা প্রকাশ করার জন্য
জোরেপদচারণা না করে । মুমিনগণ , তোমরা
সবাইআল্লাহর সামনে তওবা কর , যাতে
তোমরাসফলকাম হও । [ সূরা আন - নুরঃ ৩১ ]
আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না । নিশ্চয় এটা
অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ । [ সূরাবনী - ইসরাইলঃ ৩২ ]
নির্লজ্জতার কাছেও যেয়ো না , প্রকাশ্য হোক কিংবা
অপ্রকাশ্য [ সূরা আল আন ' আমঃ ১৫১ ]
যারা চায় যে , মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রচার
ঘটুক তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে রয়েছে
যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি । আর আল্লাহ জানেন , তোমরা
জান না । [ সূরাআন - নুরঃ ১৯ ]
ঈমানদার পুরুষ ও নারীদের সম্পর্কে আল্লাহ্
তা ' আলা পবিত্র কুরআনে বলেনঃ -
আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের
সহায়ক । তারা ভাল কথার শিক্ষা দেয় এবং মন্দ থেকে
বিরত রাখে । নামায প্রতিষ্ঠা করে , যাকাত দেয় এবং
আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবন
যাপন করে । এদেরই উপর আল্লাহ তা ' আলা দয়া
করবেন । নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশীল ,
সুকৌশলী । [ সূরা আত - তউবাঃ ৭১ ]
নিশ্চয় মুসলমান পুরুষ , মুসলমান নারী , ঈমানদার পুরুষ ,
ঈমানদার নারী , অনুগত পুরুষ , অনুগত নারী ,
সত্যবাদী পুরুষ , সত্যবাদী নারী , ধৈর্য্যশীল
পুরুষ , ধৈর্য্যশীল নারী , বিনীত পুরুষ , বিনীত
নারী , দানশীল পুরুষ , দানশীল নারী , রোযা
পালণকারী পুরুষ , রোযা পালনকারী নারী ,
যৌনাঙ্গ হেফাযতকারী পুরুষ , , যৌনাঙ্গ
হেফাযতকারী নারী , আল্লাহর অধিক যিকরকারী
পুরুষ ও যিকরকারী নারী - তাদের জন্য আল্লাহ
প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপুরষ্কার । [ সূরা
আল - আহযাবঃ ৩৫ ]
বিবাহ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্তা ' আলা
বলেন ,
তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন , তাদের বিবাহ
সম্পাদন করে দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের
মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ন , তাদেরও । তারা যদি নিঃস্ব
হয় ,
তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে সচ্ছল
করে দেবেন । আল্লাহ প্রাচুর্যময় , সর্বজ্ঞ । যারা
বিবাহে সামর্থ নয় , তারা যেন সংযম অবলম্বন করে
যে পর্যন্ত না আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে
অভাবমুক্ত করে দেন । [ সূরা আন - নুরঃ ৩২ - ৩৩ ]
দুশ্চরিত্রা নারীকূল দুশ্চরিত্র পুরুষকুলের জন্যে
এবং দুশ্চরিত্র পুরুষকুল দুশ্চরিত্রা নারীকুলের
জন্যে । সচ্চরিত্রা নারীকুল সচ্চরিত্র পুরুষকুলের
জন্যে এবং সচ্চরিত্র পুরুষকুল সচ্চরিত্রা
নারীকুলের জন্যে । তাদের সম্পর্কে লোকে
যা বলে , তার সাথে তারা সম্পর্কহীন । তাদের
জন্যে আছে ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা ।
[ সূরাআন - নুরঃ ২৬ ]
আর তোমরা মুশরেক নারীদেরকে বিয়ে
করোনা , যতক্ষণ না তারা ঈমান গ্রহণ করে । অবশ্য
মুসলমান ক্রীতদাসী মুশরেক নারী অপেক্ষা
উত্তম , যদিও তাদেরকে তোমাদের কাছে ভালো
লাগে । এবং তোমরা ( নারীরা ) কোন মুশরেকের
সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ো না , যে পর্যন্ত
সে ঈমান না আনে । একজন মুসলমান ক্রীতদাসও
একজন মুশরেকের তুলনায় অনেক ভাল , যদিও
তোমরা তাদের দেখে মোহিত হও । তারা
দোযখের দিকে আহ্বান করে , আর আল্লাহ
নিজের হুকুমের মাধ্যমে আহ্বান করেন জান্নাত ও
ক্ষমার দিকে । আর তিনি মানুষকে নিজের নির্দেশ
বাতলে দেন যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে । [ সূরা
আল - বাকারাঃ ২২১ ]
আর তোমার কাছেজিজ্ঞেস করে হায়েয ( ঋতু )
সম্পর্কে । বলে দাও , এটা অশুচি । কাজেই তোমরা
হায়েয অবস্থায়স্ত্রীগমন থেকে বিরত থাক ।
তখন পর্যন্ত তাদের নিকটবর্তী হবে না , যতক্ষণ
না তারা পবিত্রহয়ে যায় । যখন উত্তম রূপে পরিশুদ্ধ
হয়ে যাবে , তখন গমন কর তাদের কাছে ,
যেভাবে আল্লাহতোমাদেরকে হুকুম দিয়েছেন ।
নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারী এবং অপবিত্রতা থেকে
যারা বেঁচেথাকে তাদেরকে পছন্দ করেন । [ সূরা
আল - বাকারাঃ ২২২ ]
তোমাদের স্ত্রীরা হলো তোমাদের জন্য শস্য
ক্ষেত্র । তোমরা যেভাবে ইচ্ছা তাদেরকে
ব্যবহার কর । আর নিজেদের জন্য আগামী দিনের
ব্যবস্থা করএবং আল্লাহকে ভয় করতে থাক । আর
নিশ্চিতভাবে জেনে রাখ যে , আল্লাহর সাথে
তোমাদেরকে সাক্ষাতকরতেই হবে । আর যারা
ঈমান এনেছে তাদেরকে সুসংবাদ জানিয়ে দাও । [ সূরা
আল - বাকারাঃ ২২৩ ]
বিবাহ সম্পর্কিত সহীহ বুখারী শরীফের
গুরুত্বপূর্ণকিছু হাদিসঃ -
সাঈদ ইবনে আবু মারয়াম ( র ) ... সাহল ( রা ) থেকে
বর্ণিত যে , একজন মহিলা এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে নিজেকে পেশ
করলেন । এক ব্যক্তি বলল , ইয়া রাসূলাল্লাহ ! তাকে
আমার সঙ্গে শাদী বন্ধনে আবদ্ধ করিয়ে দেন ।
তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন ,
তোমার কাছে কি আছে ? সে উত্তর দিল , আমার
কাছে কিছুই নেই । রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন , যাও , তালাশ কর , কোন কিছু পাও কিনা ?
যদিও একটি লোহার আংটিও ( তা নিয়ে এসো ) । লোকটি
চলে গেল এবং ফিরে এসে বলল , একটি কিছুই
পেলাম না এমনকি লোহার আংটিও না ; কিন্তু আমার এ
তহবন্দখানা আছে । এর অর্ধেকাংশ তার জন্য । সাহল
( রা ) বলেন , তার দেহে কোন চাদর ছিল না । অতএব
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন ,
তোমার তহবন্দ দিয়ে কি করবে ? যদি তুমি এটা
পরিধান কর , মহিলার শরীরে কিছুই থাকবে না , আর
যদি সে এটা পরিধান করে তবে তোমার শরীরে
কিছুই থাকবে না । এরপর লোকটি অনেকক্ষণ
বসে রইল । এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাকে চলে যেতে দেখে ডাকলেন
বা ডাকানো হল এবং বললেন , তুমি কুরআন কতটুকু
জান ? সে বলল , আমার অমুক অমুক সূরা মুখস্থ আছে
এবং সে সূরাগুলোর উল্লেখ করল । তখন নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন , তুমি যে
পরিমান কুরআন জান , তার বিনিময়ে তোমাকে এর সাথে
শাদী দিলাম । [ সহীহ বুখারী , হাদিস নং - ৪৭৪৬
প্রশ্নঃ
একজন নারীর জন্য একই সময়ে তিন বা চারজন পুরুষকে বিয়ে করা নাজায়েয কেন? অথচ একজন পুরুষ তিন বা চারজন নারীকে বিয়ে করতে পারে।
উত্তরঃ
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
এ বিষয়টি আল্লাহর প্রতি ঈমানের সাথে সম্পৃক্ত। পৃথিবীর সকল ধর্মমতে- কোন নারীর জন্য স্বামী ছাড়া অন্য কারো সাথে যৌন মিলনে লিপ্ত হওয়া জায়েয নেই। এই ধর্মগুলোর মধ্যে কোন কোনটি আসমানী ধর্ম; যেমন- ইসলাম ধর্ম, অবিকৃত ইহুদি ও খ্রিস্টান ধর্ম। আল্লাহর প্রতি ঈমানের দাবী হচ্ছে- তাঁর বিধিবিধান ও শরিয়তকে মেনে নেওয়া। কারণ আল্লাহ তাআলা ভাল জানেন কোনটি মানুষের জন্য কল্যাণকর। কোন কোন শরয়ি হুকুমের রহস্য আমরা বুঝতে পারি। আবার কোন কোন শরয়ি হুকুমের রহস্য আমরা বুঝতে পারি না।
পুরুষের জন্য একাধিক স্ত্রী গ্রহণ জায়েয হওয়া এবং নারীর জন্য একাধিক স্বামী গ্রহণ নাজায়েয হওয়ার বেশ কিছু কারণ জ্ঞানবান সকলেই জানেন। আল্লাহ তাআলা নারীকে গর্ভ ধারণের জন্য সৃষ্টি করেছেন। পুরুষ গর্ভধারণ করে না। সুতরাং কোন নারী যদি (একাধিক পুরুষের সহবাসের পর) গর্ভধারণ করে তাহলে সন্তানের পিতৃ পরিচয় জানা যাবে না। এতে করে বংশধারায় তালগোল লেগে যাবে, পরিবারগুলো ভেঙ্গে পড়বে, শিশুরা বাস্তুহারা হয়ে পড়বে এবং নারী তার সন্তানাদি লালনপালন ও ভরণপোষণের ভার বইতে না পেরে ভেঙ্গে পড়বে। এভাবে এক পর্যায়ে নারীরা স্থায়ী বন্ধ্যাত্বও গ্রহণ করতে পারে। যার ফলে মানব বংশ বিলীন হয়ে যাবে।
এছাড়া আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে সাব্যস্ত হয়েছে, এইডসের মত দুরারোগ্য ব্যাধিগুলোর প্রধান কারণ হচ্ছে- কোন নারীর একাধিক পুরুষের সাথে মিলিত হওয়া। নারীর গর্ভাশয়ে বহু রকমের বীর্য একত্রিত হওয়ার ফলে এ ধরনের দুরারোগ্য রোগের কারণ ঘটে। এ কারণেই তো আল্লাহ তাআলা তালাক প্রাপ্ত নারী বা যে নারীর স্বামী মারা গিয়েছে তার উপর ইদ্দত পালন করা ফরজ করেছেন। যাতে করে কিছুকাল এভাবে (সঙ্গমহীন) থাকার মাধ্যমে তার গর্ভাশয় ও এর আশপাশের স্থানগুলো আগের স্বামীর বীর্য ও সঙ্গমের আলামত থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত হয়ে যায়।
আশা করছি আলোচনা লম্বা না করে এতটুকু ইশারাই যথেষ্ট। আর যদি প্রশ্নের উদ্দেশ্য হয়ে থাকে বিশ্ববিদ্যালয় বা তদূর্ধ্ব পর্যায়ের কোন গবেষণা তাহলে প্রশ্নকর্তার উচিত একাধিক স্ত্রী গ্রহণ ও এর রহস্য বিষয়ে রচিত গ্রন্থগুলো অধ্যয়ন করা। আল্লাহই তাওফিক দাতা।
http://islamqa.info/bn/10009
প্রশ্ন:
গত এক মাস আগে আমার এক আত্মীয়ের বিবাহ হয়। তারা ওলিমার আয়োজন করে এক কমিউনিটি সেন্টারে। তার বিবাহের দাওয়াত পেয়ে আমি ও আমার এক চাচাতো ভাই তাতে অংশগ্রহণ করি। যাওয়ার পর দেখি যে, সেখানে গান-বাজনাসহ আরো বিভিন্ন ধরনের গুনাহের কাজ চলছে। তখন আমরা দুজন সেন্টারের এক কোণায় বসে থাকি। পরে খানা খেয়ে ফিরে আসি।
এখন জানার বিষয় হল, শরীয়তে ওলিমার দাওয়াত কবুল করার হুকুম কী? উল্লেখিত পরিস্থিতিতে দাওয়াত কবুল করা সম্পর্কে শরীয়ত কী বলে?
উত্তর:
সাধারণ অবস্থায় ওলিমার দাওয়াত গ্রহণ করা সুন্নত। হযরত আবদুল্লাহ বিন উমর রা. থেকে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের কেউ নিজের ভাইকে দাওয়াত দিলে সে যেন তা কবুল করে। ওলিমার দাওয়াত হোক বা অন্য কোনো দাওয়াত। -সহীহ মুসলিম,হাদীস ১৪২৯
তবে আজকাল অধিকাংশ বিয়ের অনুষ্ঠানগুলোতে গান-বাজনা, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা ও বেপর্দা ব্যাপক। তাই এ ধরনের দাওয়াতে অংশগ্রহণ না করাই কর্তব্য।
তবে দাওয়াতকারী যদি এমন নিকটাত্মীয় হয় যে, তার দাওয়াতে অংশগ্রহণ না করলে সে অধিক মনক্ষুণœ হবে বা আত্মীয়তা সম্পর্ক নষ্ট হবে সেক্ষেত্রে অংশগ্রহণকারীর জন্য যদি গুনাহের কাজ থেকে প্রতিবাদ করা সম্ভব হয় তাহলে প্রতিবাদের উদ্দেশ্যে তাতে অংশগ্রহণ করা যাবে। কিন্তু প্রতিবাদ করা সম্ভব না হলে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবে। এক্ষেত্রে নিজ থেকে আত্মীয়তা সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করবে।
হেদায়া, ফাতহুল কাদীর ৮/৪৪৮; রদ্দুল মুহতার ৬/৩৪৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৭৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৪৩
বিয়ের পরে সব ঠিক হয়ে যাবে ----------------------------------
দেখা যায়- অনেক মা-বাবা তাদের ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দেয়ার সময় সত্যতা লুকায়। অথবা সত্য বলার তাদের সাহস থাকে না-মিথ্যার আশ্রয় নেয়। সেক্ষেত্রে কিছু সন্তানেরা মা-বাবার সাথে তাল মিলায় কিংবা নিরুপায় হয়ে নিরব থাকে।
“ছেলেটা অনেক ভালো, স্বভাব-চরিত্র, টাকা-পয়সা- সবই ভালো- তাই নিজের মেয়ের জন্য সিলেক্ট করে নিলাম” (অথচ উনার মেয়ে যে এই ছেলেটার যোগ্য না-সেটাই বুঝেন না)।
আবার বিপরীতভাবে “রূপবতী, গুণবতী, চটপটে মেয়ে দেখে নিজের ছেলের জন্য পছন্দ করে নিলাম, তবে আমার ছেলে যে বখাটে, সেই সাথে কিছু খাওয়ারও যে অভ্যাস আছে- সেটা যাতে কেউ না জানে। থাক না অসুবিধা কি? বিয়ের আগে ওরকম কিছু একটা থাকেই- বিয়ের পরে সব ঠিক হয়ে যাবে। বিয়েটা হয়ে যাক-- এমনই ধ্যান-ধারণা সমাজের অনেক মুরুব্বিদের।
তবে আসলেই কি নষ্ট ছেলে-মেয়েরা বিয়ের পর ভালো হয় নাকি জীবনসঙ্গীর ওপর জুলুম হয়? তাছাড়া, সমাজে এমনও দেখা যায় বিয়ের পরে স্বামী ভালো না। নেশা করার খারাপ অভ্যাস আছে কিংবা আরেক নারীর প্রতি দূর্বল। সেক্ষেত্রে ফাঁদে পড়ে যায় স্ত্রী। মা-বাবা, শশুড়-শাশুড়ি সবার একই কথা- “স্বামীকে সঠিক রাস্তায় নিয়ে এসো”।
কিন্তু আদৌ কি একটা মানুষকে সঠিক পথে আনা সহজসাধ্য? যদি না- আগে কাউকে ভালো লাগলেও- সেটাকে ভুলে যায় কিংবা মাদকাসক্ত হলেও বদ অভ্যাস ছেড়ে দেয়। জীবনটা তো নাটক-সিনেমার মতো নয় যে কয়েক ঘন্টা কিংবা কয়েক পর্বের মধ্যে বাড়ির বউ চমৎকারিত্ব দেখাবে আর স্বামী ভালো হয়ে যাবে।
যাই হোক- মানুষ বিয়ে করে শান্তির খোঁজে। তবে দুঃখের সাথে বলতে হয় সমাজের কিছু বড়দের নির্বুদ্ধিতা ( তথা বিয়ের পরে সব ঠিক হয়ে যাবে) এধারণায় কিছু পরিবারে অশান্তিই নেমে আসে।
নেককার নারীর কিছু গুণ
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, (তরজমা) পুরুষ নারীদের অভিভাবক, কারণ আল্লাহ তাদের একের উপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং এ কারণে যে, পুরুষগণ নিজেদের অর্থসম্পদ ব্যয় করে। সুতরাং সাধ্বী স্ত্রীগণ অনুগত হয়ে থাকে। পুরুষের অনুপস্থিতিতে আল্লাহর হিফাজতে (তার অধিকারসমূহ) হেফাযত করে। -সূরা নিসা : ৩৪
উক্ত আয়াতের ভিত্তিতে কুরআনের অন্যান্য আয়াত ও হাদীসের আলোকে সংক্ষেপে নেককার স্ত্রীর কিছু গুণাবলি পেশ করছি।
প্রথম গুণ :
উক্ত আয়াতে নেককার নারীর প্রথম গুণ বলা হয়েছে, সতী-সাধ্বী ও দ্বীনদার হওয়া। সালিহাত শব্দের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনে জারীর তবারী রাহ. বলেছেন, দ্বীনের সঠিক অনুসারিনী, সৎকর্মশীল নারীগণ।
এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, পার্থিব জগতটাই হল ক্ষণিক উপভোগের বস্ত্ত। আর পার্থিব জগতের সর্বোত্তম সম্পদ (উপভোগের বস্ত্ত) সাধ্বী নারী। -সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৪৬৭; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৬৫৬৭; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৪০৩১
হযরত আবু উমামা রা. হতে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কোনো মুমিনের জন্য আল্লাহর তাকওয়া অর্জনের পর নেককার স্ত্রীর চেয়ে কল্যাণকর কিছু নেই। কারণ স্বামী তাকে আদেশ করলে সে আনুগত্য করে, তার দিকে দৃষ্টিপাত করলে সে (স্বামী) মুগ্ধ হয়। তাকে নিয়ে শপথ করলে সে তা (শপথকৃত কর্ম) পূরণ করে। স্বামীর অনুপস্থিতিতে নিজেকে (অন্যায়-অপকর্ম থেকে) এবং স্বামীর সম্পদ সংরক্ষণ করে। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ১৮৫৭
হযরত সাওবান রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, সোনা-রূপা সম্পর্কিত আয়াত নাযিল হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা কোন ধরনের মাল সঞ্চয় করব? তিনি বললেন, তোমাদের প্রত্যেকেই যেন সঞ্চয় করে কৃতজ্ঞ অন্তর, যিকিরকারী মুখ এবং পরকালীন কর্মকান্ডে সহায়তাকারিনী মুমিনা নারী। -মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২৩১০১; জামে তিরমিযী, হাদীস : ৩০৯৪; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ১৮৫৬
দ্বিতীয় গুণ :
স্বামীর অনুগত ও বিশ্বস্ত হওয়াকে উক্ত আয়াতে নেককার নারীর দ্বিতীয় গুণ বলা হয়েছে।
কানিতাত শব্দের ব্যাখ্যায় হযরত কাতাদাহ রাহ. বলেন, আল্লাহ তাআলা ও স্বামীর অনুগত নারীগণ। এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, হযরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, নারী যখন পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করবে, রমযান মাসের রোযা রাখবে, নিজ লজ্জাস্থানের হেফাযত করবে এবং স্বামীর আনুগত্য করবে তখন তাকে বলা হবে, যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা জান্নাতে প্রবেশ কর। -মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৬৬১; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৪১৬৩
হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হল, নারীদের মধ্যে কোন নারী উত্তম। তিনি বললেন, স্বামী যাকে দেখলে আনন্দবোধ করে, যাকে আদেশ করলে আনুগত্য করে, স্ত্রীর বিষয়ে এবং সম্পদের ব্যাপারে স্বামী যা অপছন্দ করে তা থেকে বিরত থাকে। -মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৭৪২১; সুনানে নাসায়ী, কুবরা, হাদীস : ৮৯৬১
তৃতীয় গুণ :
উক্ত আয়াতে নেককার নারীর তৃতীয় গুণ বলা হয়েছে, স্বামীর অনুপস্থিতিতে তার ধন-সম্পদ হেফাযত করবে এবং নিজের সতীত্বের হেফাযত করবে।
আয়াতের এই অংশের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনে জারীর তবারী রাহ. বলেন, নারীগণ তাদের স্বামীর অবর্তমানে নিজেদের লজ্জাস্থান হেফাযত করবে এবং এক্ষেত্রে কোনো ধরনের খেয়ানত করবে না। স্বামীর ধন-সম্পদ সংরক্ষণ করবে। তাদের উপর এ দায়িত্ব আল্লাহর পক্ষ থেকেই আরোপিত।
এ সম্পর্কিত হাদীস শরীফের বর্ণনা পূর্বোক্ত হাদীসসমূহে উল্লেখ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে আরেকটি হাদীস উল্লেখ করছি।
হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, উত্তম স্ত্রী সে, যার প্রতি দৃষ্টিপাত করলে তোমাকে আনন্দিত করে, আদেশ করলে আনুগত্য করে, তুমি দূরে থাকলে তার নিজের ব্যাপারে এবং তোমার সম্পদের ব্যাপারে তোমার অধিকার রক্ষা করে। তারপর তিনি কুরআনের উক্ত আয়াত (পুরুষ নারীদের অভিভাবক) তেলাওয়াত করেন। -তাফসীরে তবারী, হাদীস : ৯৩২৯; মুসনাদে ত্বয়ালিসী, হাদীস : ২৩২৫
চতুর্থ গুণ :
পবিত্র ও চরিত্রবান হওয়া। এ প্রসঙ্গে কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে, (তরজমা) পবিত্র নারীগন পবিত্র পুরুষদের উপযুক্ত এবং পবিত্র পুরুষগণ পবিত্র নারীদের উপযুক্ত।
এখানে মুমিন নর-নারীর জন্য মূলনীতি বলে দেওয়া হয়েছে যে, আল্লাহ তাআলা মানবচরিত্রে স্বাভাবিকভাবে পরস্পরের মাঝে যোগসূত্র রেখেছেন। পবিত্র ও চরিত্রবান নারীদের আগ্রহ পবিত্র ও চরিত্রবান পুরুষদের প্রতি হয়ে থাকে। অনুরূপভাবে পবিত্র ও চরিত্রবান পুরুষদের আগ্রহ পবিত্র ও চরিত্রবান নারীদের প্রতি হয়ে থাকে। স্বাভাবিকভাবে প্রত্যেকেই নিজ নিজ আগ্রহ অনুযায়ী জীবনসঙ্গী খোঁজ করে নেয় এবং প্রাকৃতিক বিধান অনুযায়ী সেটাই বাস্তবরূপ লাভ করে। এ জন্য জীবনসঙ্গী ও সঙ্গিনী নির্বাচনের ক্ষেত্রে ইসলাম দ্বীনদারিকে প্রাধান্য দিতে জোর তাকিদ দিয়েছে।
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. হতে বর্ণিত, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তিন গুণের যেকোনো একটি গুণের কারণে নারীকে বিবাহ করা হয় : ধন-সম্পদের কারণে, রূপ-সৌন্দর্যের কারণে ও দ্বীনদারির কারণে। তুমি দ্বীনদার ও চরিত্রবানকেই গ্রহণ কর। -মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১৭৪৩৪; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১১৭৬৫; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৪০৩৪
পঞ্চম গুণ :
বিবাহের মাধ্যমে চারিত্রিক পবিত্রতা সম্পন্ন হওয়া, গোপনে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপনে লিপ্ত না হওয়া। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, (তরজমা) তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে চারিত্রিক পবিত্রতাসম্পন্ন হবে, ব্যভিচারিনী হবে না এবং গোপনে কোনো অবৈধ সম্পর্ক স্থাপনকারিনী হবে না। -সূরা নিসা : ২৫
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় হযরত ইবনে আববাস রা. বলেন, চারিত্রিক নিষ্কলুষতার অধিকারিনী নারীগণ, যারা প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে ব্যভিচারিনী হবে না এবং সঙ্গোপনে অবৈধ বন্ধু গ্রহণকারিনী হবে না। তিনি বলেন, জাহেলী যুগে লোকেরা প্রকাশ্যে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়াকে হারাম মনে করত, কিন্তু গোপনে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়াকে হালাল মনে করত। এই প্রেক্ষিতেই আল্লাহ তাআলা কুরআনের আয়াত নাযিল করলেন, তোমরা প্রকাশ্যে হোক, অপ্রকাশ্যে হোক কোনো রকম অশ্লীল কাজের নিকটেও যেও না। -সূরা আনআম : ১৫১; তাফসীরে তবারী, হাদীস : ৯০৯৫, ৯০৭৬, ৪/২২
বর্তমান সমাজে অবৈধ সম্পর্কের ব্যাধি মহামারিতে পরিণত হয়েছে। পর্দাহীনতা, সহশিক্ষা এবং অশ্লীল ফিল্ম ও ছবির বদৌলতে একদিকে অবিবাহিত উঠতি নর-নারী তথাকথিত প্রেমের নামে ভয়ঙ্কররূপে প্রকাশ্য অশ্লীলতায় মেতে উঠছে, অন্যদিকে পরকীয়া প্রেমের কারণে ঘর ভাঙছে অসংখ্য নারীর। তাই মুসলমান নর-নারীরা যতক্ষণ আল্লাহর হুকুম ও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে না চলবে ততক্ষণ পারিবারিক শান্তি ও দাম্পত্য জীবনের সুখ খুঁজে পাবে না।
ষষ্ঠ গুণ :
দ্বীনদার ও চরিত্রবান হওয়ার সাথে সাথে সরলমতী ও সাদাদিলের অধিকারিনী হওয়া। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, (তরজমা) চরিত্রবান, সরলমতী ঈমানদার নারীগণ। -সূরা নূর : ২৩
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনে জারীর তবারী রাহ. বলেন, যারা অশ্লীলতা ও নির্লজ্জতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ অসচেতন (বহু দূরত্বে অবস্থানকারী)।
আল্লামা আলুসী রাহ. বলেন, পবিত্রতার সার্বিক উপাদান নিয়ে বেড়ে উঠা এবং উত্তম চরিত্রের উপর লালিত-পালিত হওয়ার কারণে অন্য কোনো চিন্তা ও মানসিকতা যাদের কল্পনায় আসে না। এই গুণ পূর্ণ নিষ্কলুষতা ও চারিত্রিক পবিত্রতার প্রমাণ বহন করে, যা শুধু মুহাসানাত (সতী নারী) শব্দের মধ্যে পাওয়া যায় না। -রূহুল মাআনী ৬/১২৬
অন্য কিতাবে বলা হয়েছে, আত্মার ব্যাধিমুক্ত, স্বচ্ছ অন্তরের নারীগণ, যাদের মধ্যে প্রবঞ্চনামূলক চাতুর্য নেই। যাদের স্বভাব-প্রকৃতিতে অসৎ কোনো মনোবাসনা নেই। শৈশবকাল থেকেই এই স্বভাব-সুচরিত্র গড়ে উঠতে সহায়ক হয়। -গারায়েবুল কুরআন ৫/১৭৩
আল্লাহ তাআলা এ ধরনের গুণের অধিকারিনী নারীকে ঈমানদার পরিচয়ে ভূষিত করেছেন।
এই বৈশিষ্ট্যের নারীদের বাইরের জগত সম্পর্কে ধারণা থাকে না, অবৈধ সম্পর্কের কল্পনাও তাদের অন্তরে থাকে না। তারা প্রবঞ্চনা কি জিনিস বুঝেই না। ছল-ছাতুরি জানে না। প্রতারণা ও মিথ্যা বলে না। পর্দাহীনতা ও ফ্যাশন সম্পর্কে চিন্তাও করে না। ফলে তাদের চরিত্র কলুষিত হওয়া ও দ্বীনদারী বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কাও থাকে না।
সপ্তম গুণ :
গৃহে অবস্থান করা। অপ্রয়োজনে বাইরে না যাওয়া। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, (তরজমা) তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করো। (পর পুরুষকে) সাজসজ্জা প্রদর্শন করে বেড়িও না। যেমন প্রাচীন জাহেলী যুগে প্রদর্শন করা হত। -সূরা আহযাব : ৩৩
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে কাছীর রাহ. বলেন, তোমরা নিজেদের ঘরে অবস্থানকে অবধারিত করে নাও। প্রয়োজন ব্যতীত ঘর হতে বের হয়ো না।
এ আয়াতে স্পষ্ট করে মূলনীতি বলা হয়েছে যে, নারীর আসল কাজ তার গৃহে অবস্থান। ঘরোয়া কর্তব্য পালন করা এবং খান্দানকে গড়ে তোলাই তার মূল দায়িত্ব। যেসব তৎপরতা এ দায়িত্ব পালনে বিঘ্ন ঘটায় তা নারীজীবনের মৌল উদ্দেশ্যের পরিপন্থী। এবং তা দ্বারা সমাজের ভারসাম্য নষ্ট হয়। এর অর্থ এমন নয় যে, ঘর থেকে বের হওয়া তার জন্য একদম জায়েয নয়; বরং প্রয়োজনে সে পর্দার সাথে বাইরে যেতে পারবে। তবে বাইরে গমন ও অবস্থান শুধু প্রয়োজনবশত ও প্রয়োজন পরিমাণ হতে হবে। এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে-হযরত আনাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নারীরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আগমন করে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! পুরুষরা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ ও অন্যান্য মর্যাদায় অগ্রগামী হয়েছেন। আমাদের জন্য কি এমন কোনো আমল রয়েছে যার মাধ্যমে মুজাহিদীনের সমপর্যায়ের মর্যাদা ও সওয়াবের অধিকারী হতে পারব? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের থেকে যারা নিজ গৃহে অবস্থান করবে সেটাই তাদেরকে মুজাহিদদের ফযীলত ও সওয়াবে উপনীত করবে। -মুসনাদে বাযযার, হাদীস : ৬৯৬১; তাফসীরে ইবনে কাছীর ৩/৭৬৮
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. হতে বর্ণিত, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, নারী হল আবরণীয়। যখন সে বের হয় শয়তান তার অনুসরণ করে। যখন সে ঘরে আবদ্ধ থাকে তখন আল্লাহর রহমত লাভের অতি নিকটবর্তী থাকে। -মুসনাদে বাযযার, হাদীস : ২০৬১
প্রশ্ন:
জনৈক ব্যক্তি এক অবিবাহিতা নারীর সাথে ব্যাভিচারে লিপ্ত হয় ফলে একটি পুত্রসন্তান জন্ম হয়। বিষয়টি এলাকার অনেক মানুষই জানে। সেই ব্যক্তি মারা গেলে তার অবৈধ সন্তান উত্তরাধিকারসূত্রে সম্পত্তির দাবি করে। তখন মৃতের বৈধ ছেলে-মেয়ে ও অন্যান্য ওয়ারিসগণ তাকে সম্পত্তি দিতে অস্বীকার করে। শরীয়তের দৃষ্টিতে এর সমাধান কী? জারজ সন্তান কি এক্ষেত্রে মিরাসের অধিকার লাভ করবে? আশা করি উত্তর জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর:
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারের দাবিদার উক্ত সন্তান ঐ ব্যভিচারী থেকে মিরাস পাবে না। তার বংশসূত্র তার মা থেকে প্রমাণিত হবে এবং সে তার থেকে মিরাস পাবে।
হাদীস শরীফে এসেছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি কোনো স্বাধীন নারী অথবা বাদীর সথে ব্যভিচারে লিপ্ত হল (এবং তাতে সন্তান জন্ম নিল) তাহলে সেটা জারজ সন্তান। সে ব্যভিচারী থেকে মিরাস পাবে না, ব্যভিচারীও তার থেকে মিরাস পাবে না। -জামে তিরমিযী,হাদীস : ২১১৩
সুতরাং এক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তির মিরাসের দাবি গ্রহণযোগ্য হবে না।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৩২০৬৫; ইলাউস সুনান ৮/৭৯; আলবাহরুর রায়েক ৮/৫০৩; আলমুহীতুল বুরহানী ২৩/৩৬৪; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৭/৪৯১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২০/৩৪৭
এটি হাদীসের পাঠ নয় : স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর বেহেশত
স্ত্রীর প্রতি স্বামীর হক বা স্বামীর আনুগত্য বিষয়ে অনেকে উপরের কথাকে হাদীস হিসেবে পেশ করে থাকে। যার আরবী হল, الجنة تحت أقدام الأزواج । কিন্তু এ শব্দ-বাক্যে কোনো হাদীস পাওয়া যায় না।
সুতরাং এটিকে হাদীস হিসেবে বলা যাবে না। তবে কিছু বর্ণনায় এর মর্মার্থ পাওয়া যায়।
মুআত্তা মালেক, মুসনাদে আহমাদ, মুসতাদরাকে হাকেমসহ হাদীসের আরো কিছু কিতাবে বর্ণিত হয়েছে-
একবার এক নারী সাহাবী রাসূলের কাছে এলেন নিজের কোনো প্রয়োজনে। যাওয়ার সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কি স্বামী আছে? তিনি বললেন, জী, আছে।
নবীজী বললেন, তার সাথে তোমার আচরণ কেমন? সে বলল, আমি যথাসাধ্য তার সাথে ভালো আচরণ করার চেষ্টা করি।
তখন নবীজী বললেন, হাঁ, তার সাথে তোমার আচরণের বিষয়ে সজাগ থাকো, কারণ সে তোমার জান্নাত বা তোমার জাহান্নাম।
মুআত্তা মালেক, হাদীস ৯৫২; মুসনাদে আহমাদ, ৪/৩৪১ হাদীস ১৯০০৩; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ২৭৬৯; সুনানে কুবরা, বায়হাকী, হাদীস ১৪৭০৬
স্বামী-স্ত্রীর একের উপর অন্যের হক রয়েছে। এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমে মৌলিক নির্দেশনা দিয়েছেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَلَهُنَّ مِثْلُ الَّذِي عَلَيْهِنَّ بِالْمَعْرُوفِ.
আর স্বামীদের যেমন তাদের (স্ত্রীদের) উপর ন্যায়সঙ্গত হক রয়েছে, তেমনি তাদেরও হক রয়েছে স্বামীদের উপর। সূরা বাকারা (২) : ২২৯
আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিস্তারিতভাবে স্বামী-স্ত্রীর হক তুলে ধরেছেন এবং স্বামীদেরকে স্ত্রীর হক আদায়ের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন।
বিদায় হজ্বের ভাষণে নবীজী বলেছেন,
اتَّقُوا اللَّهَ فِي النِّسَاءِ.
তোমরা নারীদের বিষয়ে আল্লাহকে ভয় কর। সহীহ মুসলিম, হাদীস ১২১৮
সাথে সাথে নারীদেরকে স্বামীর আনুগত্য করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন এবং এর ফযীলতও বর্ণনা করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নারী যখন পাঁচ ওয়াক্ত নামায ঠিকমত আদায় করবে, রমযানের রোযা রাখবে, আপন লজ্জাস্থানের হেফাযত করবে, স্বামীর আনুগত্য করবে তখন সে জান্নাতের যেই দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে। সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৪১৬৩
সুতরাং গুনাহের কাজ নয় এমন বিষয়ে স্বামীর আনুগত্য জরুরি। কিন্তু স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর বেহেশত’ এটি হাদীস নয়।
`তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তি উত্তম যে স্ত্রীদের কাছে উত্তম`
মাহফুজ আবেদ
বিয়ে হচ্ছে এমন একটি সম্পর্ক- যা স্বামী-স্ত্রী উভয়ের পারস্পরিক অধিকারের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়। এ কারণে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের এটা অবশ্য কর্তব্য যে, তারা সৌহার্দ্যপূর্ণ জীবনযাপন করবে এবং কোনো প্রকার মানসিক অসন্তুষ্টি ও দ্বিধা বাতিরেকেই তাদের যা কিছু আছে একে অন্যের জন্য অকাতরে ব্যয় করবে!
এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেছেন,
‘আর তোমরা তাদের (স্ত্রীদের) সঙ্গে উত্তম ব্যবহার কর।’ -সূরা আন নিসা: ১৯
তাইতো স্ত্রীর কাছে উত্তম ব্যক্তিকে ইসলাম উত্তম মানুষ বলে ঘোষণা করেছে। এ প্রসঙ্গে এক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে,
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত নবী করিম (সা.) বলেন,
'মোমিনদের মধ্যে পরিপূর্ণ মোমিন ওই ব্যক্তি, যার ব্যবহার ও চরিত্র সর্বাপেক্ষা উত্তম। আর তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তি উত্তম যে স্ত্রীদের কাছে উত্তম।’ -তিরমিজি
ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে বিয়ে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পক্ষ থেকে জারিকৃত একটি সুন্নত বিশেষ। তবে শর্ত হলো, বিয়েকারীর সামর্থ্য থাকতে হবে। স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের মধ্যে কতগুলো অবশ্য পালনীয় দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে, যেগুলো বাস্তবায়িত করা উভয়ের প্রতি অপরিহার্য কর্তব্য।
হজরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন,
'হে যুবক সম্প্রদায় তোমাদের মধ্যে যে বিয়ের সামর্থ্য রাখে সে যেন বিয়ে করে। কেননা তা চক্ষুকে নিম্নগামী রাখে এবং লজ্জাস্থানকে হেফাজত করে। আর যে সামর্থ্য রাখে না সে যেন রোজা রাখে। রোজা হলো খোজা হওয়ার শামিল।’ –সহিহ বোখারি ও মুসলিম
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন,
'সাবধান! তোমাদের প্রতি তোমাদের স্ত্রীদের যেমন অধিকার রয়েছে এবং তোমাদেরও স্ত্রীদের প্রতি তদ্রূপ অধিকার রয়েছে। তারা যেন তোমাদের শয্যাস্থানে এমন লোককে স্থান না দেয় যাদের তোমরা অপছন্দ করো এবং তারা যেন তোমাদের ঘরে এমন লোককে প্রবেশের অনুমতি না দেয়, যাদের তোমরা প্রবেশ করতে অপছন্দ করো।'
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত,
হজরত রাসূলে পাক (সা.) বলেন,
'কারও যদি দুইজন স্ত্রী থাকে এবং সে উভয়ের সঙ্গে ন্যায়বিচার না করে, তাহলে কেয়ামতের দিন সে বিকলাঙ্গ অবস্থায় হাজির হবে।' –তিরমিজি
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত,
আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেন,
'নারী যদি যথারীতি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, রমজানের রোজা পালন করে, তার লজ্জাস্থানকে হেফাজত করে এবং স্বামীর আনুগত্য করে, সে বেহেশতের যে কোনো দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে।'
মহান আল্লাহতায়ালা সবাইকে স্বামী-স্ত্রীর অধিকারগুলো সঠিকভাবে পালন করার তওফিক দান করুন। আমিন।
মুসলিম বিয়ে রেজিস্ট্রেশন
অ্যাডভোকেট মো. আশিক ইকবাল
বিয়ে রেজিস্ট্রেশনের গুরুত্ব অনেক। রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে বিয়ের একটি প্রামাণ্য দলিল। মুসলিম বিবাহ ও তালাক (নিবন্ধিকরন) আইন ১৯৭৪ অনুযায়ী বিয়ে অবশ্যই আইন অনুযায়ী রেজিস্ট্রি করতে হবে।
বিয়ে যিনি রেজিস্ট্রি করেন তাকে আইন অনুযায়ী বলা হয় নিকাহ রেজিস্টার (Nikah Register)। যে ক্ষেত্রে স্বয়ং নিকাহ রেজিস্টার এর মাধ্যমে বিয়ে হয় সে ক্ষেত্রে উক্ত বিয়ে অবশ্যই তৎক্ষণাৎ রেজিস্ট্রি করতে হবে। অপরদিকে একজন নিকাহ রেজিস্টার ছাড়া অন্য কেউ যেমন কোনো মাওলানা বা হুজুরের মাধ্যমে বিয়ে অনুষ্ঠিত হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে বর বিয়ে যেদিন হবে সেদিন থেকে পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট নিকাহ রেজিস্টার এর কাছে গিয়ে বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করবেন।
বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করার দায়দায়িত্ব স্বামীর। এক্ষেত্রে স্বামী বিয়ে রেজিস্ট্রি না করলে বা তার দায়িত্ব পালন না করলে দুই বছর পর্যন্ত মেয়াদের বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা তিন হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয়বিধ শাস্তি হতে পারে।
কতদিনের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন করবে/রেজিস্ট্রেশনের সময়ঃ
রেজিস্ট্রেশন বিয়ের দিন করা সব থেকে যুক্তিযুক্ত। এতে করে পরবর্তীতে কোনো বাড়তি ঝামেলা যদি হয় সেটি থেকে মুক্ত থাকা যায়। তবে আমাদের দেশে আইন অনুযায়ী বিয়ের দিন অথবা বিয়ের ৩০ দিনের মাঝে রেজিস্ট্রি করা যায়।
বিয়ের দিন কোনো কারণে রেজিস্ট্রি করা না হলে অনেক সময় পরে কাজী অফিসে গিয়ে রেজিস্ট্রি করা হয়ে ওঠে না। তাই যখনই বিয়ে পরানো হবে সেই সাথে সাথেই রেজিস্ট্রি করে ফেলা ভালো।
বিয়ে রেজিস্ট্রি করলে যে সুবিধা গুলো পাওয়া যায়ঃ
যেহেতু বিয়ের একমাত্র লিখিত প্রমান বা ডকুমেন্ট হচ্ছে রেজিস্ট্রেশন, সেহেতু বিয়ে সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যায় এর প্রয়োজন হয়। এমনও হতে পারে যে বিয়ে বৈধ না অবৈধ বা বিয়ে নিয়ে কোনো সন্দেহ দেখা দেয় সেক্ষেত্রেও রেজিস্ট্রেশন বিয়ের শক্ত একটি প্রমান হিসাবে কাজ করে।
বিয়ের পরে বিভিন্ন রকম সমস্যা যেমন স্ত্রী ও সন্তানকে কোন কারণ ছাড়া ভরণপোষণ না দিলে, স্ত্রীর বিনা অনুমতিতে আরেকটি বিয়ে করলে বা স্ত্রীকে তালাক দিলে, দেনমোহর থেকে বঞ্চিত করলে, প্রতারণা করে বিবাহিত থাকা অবস্থায় আর কাউকে বিয়ে করলে।
এসব ক্ষেত্রে স্ত্রী আদালতে কোন নালিশ করতে চাইলে প্রথমেই বিয়ের প্রমান হিসাবে রেজিস্ট্রিকৃত নিকাহনামা আদালতে জমা দিতে হবে। কেউ নিজের বিয়ে ইচ্ছামতো অস্বীকার করতে চাইলেও বিয়ে রেজিস্ট্রি করে রাখার কারণে তা পারবে না।
রেজিস্ট্রেশন ফিঃ
রেজিস্ট্রেশন ফি সম্পর্কে না জানার কারণে অনেক সময় কাজী বা নিকাহ রেজিস্টার ফি এর অতিরিক্ত টাকাও নিয়ে নিতে পারে। সে কারণে রেজিস্ট্রেশন ফি সম্পর্কে ভালো করে জানা থাকা দরকার। বিয়ে রেজিস্ট্রেশন এর জন্য সরকার নিয়োজিত কাজী বা নিকাহ রেজিস্টার রয়েছে।
নিকাহ রেজিস্টার বিয়ে রেজিস্ট্রেশন এর জন্য প্রতি হাজার দেনমোহরে ১২.৫০ টাকা হারে ফি গ্রহন করবেন। দেনমোহরের পরিমান চার লক্ষ টাকার অধিক হলে পরবর্তী প্রতি এক লক্ষ টাকার দেনমোহর বা এর অংশবিশেষের জন্য একশত টাকা হারে রেজিস্ট্রেশন ফি নিতে পারবেন। তবে দেনমোহর এর পরিমান যাই হোক সবনিম্ন ফি ২০০ টাকার কম হবে না। বিয়ে রেজিস্ট্রেশন বাবদ ফিস স্বামীকে প্রদান করতে হবে।
রেজিস্ট্রেশন এর ক্ষেত্রে কাজীর দায়িত্ব:
১৯৭৫ সালে মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিস্ট্রেশন) বিধিমালাতে রেজিস্ট্রি করার আগে কাজীকে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। কাজীর সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হচ্ছে, তিনি পুর্ণাঙ্গ বিয়ের সব সব শর্ত পুরণ হচ্ছে কিনা তা দেখবেন। বিয়েতে ছেলে এবং মেয়ের পূর্ণ সম্মতি রয়েছে কিনা, উপযুক্ত সাক্ষী উপস্থিত আছে কিনা ইত্যাদি দেখবেন।
কাজীর আরেকটি দায়িত্ব হলো নিকাহনামার প্রতিটি ঘর পুরণ করানো। তবে মিথ্যা তথ্য দেয়ার জন্য কাজী দায়ি নন। কারণ সব তথের সত্যতা খুজে নেয়া কাজীর পক্ষে সম্ভব নাও হতে পারে। তিনি শুধু যাচাই করে নিবেন যে, তথ্যগুলোর কোথাও কোনো অসামজস্যতা আছে কিনা যা পরবর্তীতে সন্দেহের সৃষ্টি করে। যেমন ছেলে বা মেয়ের বয়স নির্ধারণ এর ক্ষেত্রে তিনি জন্ম নিবন্ধন লিপি দেখতে পারেন। তবে কাজী যদি ইচ্ছাকৃত কোনো ভুল করেন অথবা নিজের দায়িত্ব যথাযথ সতর্কতার সাথে পালন না করেন অথবা দায়িত্বে অবহেলা করেন অথবা নিকাহনামার ঘরগুলো ঠিকভাবে পুরন না করেন, তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জেলা প্রশাসন বা জেলা রেজিস্টার বরাবর আবেদন করা যাবে।
সংগ্রহ: http://www.banglanews24.com/fullnews/bn/371344.html
0 comments:
Post a Comment