Thursday, December 10, 2015

মুসলিম বিয়ে রেজিস্ট্রেশন

মুসলিম বিয়ে রেজিস্ট্রেশন
অ্যাডভোকেট মো. আশিক ইকবাল


বিয়ে রেজিস্ট্রেশনের গুরুত্ব অনেক রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে বিয়ের একটি প্রামাণ্য দলিল মুসলিম বিবাহ তালাক (নিবন্ধিকরন) আইন ১৯৭৪ অনুযায়ী বিয়ে অবশ্যই  আইন অনুযায়ী রেজিস্ট্রি করতে হবে

বিয়ে যিনি রেজিস্ট্রি  করেন তাকে আইন অনুযায়ী বলা হয় নিকাহ রেজিস্টার (Nikah Register) যে ক্ষেত্রে স্বয়ং নিকাহ রেজিস্টার এর মাধ্যমে বিয়ে হয় সে ক্ষেত্রে উক্ত বিয়ে অবশ্যই তৎক্ষণাৎ রেজিস্ট্রি করতে হবে অপরদিকে একজন নিকাহ রেজিস্টার ছাড়া অন্য কেউ যেমন কোনো মাওলানা বা হুজুরের মাধ্যমে বিয়ে অনুষ্ঠিত হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে বর বিয়ে যেদিন হবে সেদিন থেকে পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট নিকাহ রেজিস্টার এর কাছে গিয়ে বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করবেন

বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করার দায়দায়িত্ব স্বামীর এক্ষেত্রে স্বামী বিয়ে রেজিস্ট্রি না করলে বা তার দায়িত্ব পালন না করলে দুই বছর পর্যন্ত মেয়াদের বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা তিন হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয়বিধ শাস্তি হতে পারে

কতদিনের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন করবে/রেজিস্ট্রেশনের সময়ঃ
রেজিস্ট্রেশন বিয়ের দিন করা সব থেকে যুক্তিযুক্ত এতে করে পরবর্তীতে কোনো বাড়তি ঝামেলা যদি হয় সেটি থেকে মুক্ত থাকা যায় তবে আমাদের দেশে আইন অনুযায়ী বিয়ের দিন অথবা বিয়ের ৩০ দিনের মাঝে রেজিস্ট্রি করা যায়

বিয়ের দিন কোনো কারণে রেজিস্ট্রি করা না হলে অনেক সময় পরে কাজী অফিসে গিয়ে রেজিস্ট্রি করা হয়ে ওঠে না তাই যখনই বিয়ে পরানো  হবে সেই সাথে সাথেই রেজিস্ট্রি করে ফেলা ভালো


বিয়ে রেজিস্ট্রি করলে যে সুবিধা গুলো পাওয়া যায়ঃ
যেহেতু বিয়ের একমাত্র লিখিত প্রমান বা ডকুমেন্ট হচ্ছে রেজিস্ট্রেশন, সেহেতু বিয়ে সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যায় এর প্রয়োজন হয় এমনও হতে পারে যে বিয়ে বৈধ না অবৈধ বা বিয়ে নিয়ে কোনো সন্দেহ দেখা দেয় সেক্ষেত্রেও রেজিস্ট্রেশন বিয়ের শক্ত একটি প্রমান হিসাবে কাজ করে

বিয়ের পরে বিভিন্ন রকম সমস্যা যেমন স্ত্রী সন্তানকে কোন কারণ ছাড়া ভরণপোষণ না দিলে, স্ত্রীর বিনা অনুমতিতে আরেকটি বিয়ে করলে বা স্ত্রীকে তালাক দিলে, দেনমোহর থেকে বঞ্চিত করলে, প্রতারণা করে বিবাহিত থাকা অবস্থায় আর কাউকে বিয়ে করলে

এসব ক্ষেত্রে স্ত্রী আদালতে কোন নালিশ করতে চাইলে প্রথমেই বিয়ের প্রমান হিসাবে রেজিস্ট্রিকৃত নিকাহনামা আদালতে জমা দিতে হবে কেউ নিজের বিয়ে ইচ্ছামতো অস্বীকার করতে চাইলেও বিয়ে রেজিস্ট্রি করে রাখার কারণে তা পারবে না


রেজিস্ট্রেশন ফিঃ
রেজিস্ট্রেশন ফি সম্পর্কে না জানার কারণে অনেক সময় কাজী বা নিকাহ রেজিস্টার ফি এর অতিরিক্ত টাকাও নিয়ে নিতে পারে সে কারণে রেজিস্ট্রেশন ফি সম্পর্কে ভালো করে জানা থাকা দরকার বিয়ে রেজিস্ট্রেশন এর জন্য সরকার নিয়োজিত কাজী বা নিকাহ রেজিস্টার রয়েছে

নিকাহ রেজিস্টার বিয়ে রেজিস্ট্রেশন এর জন্য প্রতি হাজার দেনমোহরে ১২.৫০ টাকা হারে ফি গ্রহন করবেন দেনমোহরের পরিমান চার লক্ষ টাকার অধিক হলে পরবর্তী প্রতি এক লক্ষ টাকার দেনমোহর বা এর অংশবিশেষের জন্য একশত টাকা হারে রেজিস্ট্রেশন ফি নিতে পারবেন তবে দেনমোহর এর পরিমান যাই হোক সবনিম্ন ফি ২০০ টাকার কম হবে না বিয়ে রেজিস্ট্রেশন বাবদ ফিস স্বামীকে প্রদান করতে হবে


রেজিস্ট্রেশন এর ক্ষেত্রে কাজীর দায়িত্ব:
১৯৭৫ সালে মুসলিম বিবাহ তালাক (রেজিস্ট্রেশন) বিধিমালাতে রেজিস্ট্রি করার আগে কাজীকে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে কাজীর সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হচ্ছে, তিনি পুর্ণাঙ্গ বিয়ের সব সব শর্ত পুরণ হচ্ছে কিনা তা দেখবেন বিয়েতে ছেলে এবং মেয়ের পূর্ণ সম্মতি রয়েছে কিনা, উপযুক্ত সাক্ষী উপস্থিত আছে কিনা ইত্যাদি দেখবেন

কাজীর আরেকটি দায়িত্ব হলো নিকাহনামার প্রতিটি ঘর পুরণ করানো তবে মিথ্যা তথ্য দেয়ার জন্য কাজী দায়ি নন কারণ সব তথের সত্যতা খুজে নেয়া কাজীর পক্ষে সম্ভব নাও হতে পারে তিনি শুধু যাচাই করে নিবেন যে, তথ্যগুলোর কোথাও কোনো অসামজস্যতা আছে কিনা যা পরবর্তীতে সন্দেহের সৃষ্টি করে যেমন ছেলে বা মেয়ের বয়স নির্ধারণ এর ক্ষেত্রে তিনি জন্ম নিবন্ধন লিপি দেখতে পারেন তবে কাজী যদি ইচ্ছাকৃত কোনো ভুল করেন অথবা নিজের দায়িত্ব যথাযথ সতর্কতার সাথে পালন না করেন অথবা দায়িত্বে অবহেলা করেন অথবা নিকাহনামার ঘরগুলো ঠিকভাবে পুরন না করেন, তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জেলা প্রশাসন বা জেলা রেজিস্টার বরাবর আবেদন করা যাবে

সংগ্রহ: http://www.banglanews24.com/fullnews/bn/371344.html

1 comment:

  1. ধন্যবাদ কাজি অফিস-কে, বিশেষ ধন্যবাদ লেখক অ্যাডভোকেট মোঃ আশিক ইকবাল স্যারকে। সুন্দর সাজানো গোছানো একটি লেখার জন্য।

    ReplyDelete