সাধারণত
মায়েরাই মেয়েদের সার্বিক দেখাশোনা করেন। এ
কারণে মায়ের সাথেই মেয়েদের সম্পর্ক থাকে বেশি। তাই
বিদায়ের আগে মেয়েদের যেসব বিষয় বুঝিয়ে দেওয়া দরকার তা মায়েরাই করে থাকেন। বিদায়ের
আগে মেয়ের বাবারও মেয়েকে অনেক কিছু বলার থাকে। বিশেষ
করে সে-বাবা যদি হন একজন সচেতন মানুষ। কিন্তু
তখন মনে যে আবেগের ঢেউ থাকে তাতে শেষ পর্যন্ত আর কিছুই বলা হয়ে ওঠে না- জিহ্বা আড়ষ্ট হয়ে আসে, কথা বলার শক্তি ফুরিয়ে আসে। কলমের
আশ্রয় গ্রহণ করা ছাড়া অপারগ ‘জনকের’ জন্যে তখন আর কোনো পথ খোলা থাকে না। কলমের
আশ্রয় নিয়ে এই লেখাটিতে একজন ‘জনকের’ সেই না-বলা কথাগুলোকে ধারণ করার চেষ্টা করা হয়েছে, বিদায় বেলা যা তিনি মেয়েকে মুখ ফুটে বলতে পারেননি। সব
পিতার মনেই হয়তো এ অনুভূতিগুলো থাকে। নতুন
জীবনে প্রবেশকারী মেয়েরা যদি এ কথাগুলো মনে
রাখে তাহলে হয়তো তাদের সংসার-জীবন সুখী হবে।
প্রিয়
মা! এই তো সেদিনকার কথা, তুমি আমাদের ঘরে ফুল হয়ে ফুটেছিলে। আল্লাহ
জানেন, তোমার জন্মের পর দয়াময় আল্লাহর দরবারে আমি কী শুকরিয়া আদায় করেছি! মেয়েরা জন্ম নেয় ‘রহমত’ হয়ে। শুধু
নিজের নয়, বাবা-মার রিযিকও একটি মেয়ে নিয়ে আসে। তোমার
জন্মের পর আমাদের রিযিকে যে-বরকত নেমে এসেছিল আমি তা অনুভব করতে পেরেছিলাম। আমার
স্পষ্ট মনে পড়ে তোমার ছোটবেলার কথা- তুমি হৈ চৈ করতে, বায়না-আবদার করতে, কখনো জেদ ধরতে- রেগে যেতে, আবার একটু পর উৎফুল্ল হয়ে উঠতে...।
আল্লাহ
তাআলার বড় অনুগ্রহ, তুমি এমন পরিবেশে চোখ মেলেছো, যেখানে তুমি খুব ছোটকালেই কালিমা ও নামাজ শিখে
ফেলতে পেরেছো। কুরআন
মাজীদ হিফজ করেছো, যা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম সম্পদ। এরপর
কুরআন বোঝা, হাদীস শেখা ও ফিক্হ অধ্যয়নেরও
সুযোগ হয়েছে। এগুলো
শেখার পথ আল্লাহ তোমার জন্যে সহজ করে দিয়েছিলেন। আর
আজ তোমার বিয়ে দিয়ে তোমার প্রতি শেষ দায়িত্বটুকু পালন করে আমি নিশ্চিত হচ্ছি। এই
‘মহৎ’ দায়িত্বটি পালন করতে পেরে আমার খুশি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু
মনের আকাশজুড়ে ছেয়ে আছে কালো মেঘ। কলিজার
টুকরা মেয়েকে বিদায় দেওয়া কি সহজ! বিয়ের দিন ঠিক হওয়ার পর থেকে হয়তো একটি দিনও এমন যায়নি, যেদিন আমার চোখ থেকে অশ্রু ঝরেনি। মন
চাইছিল, নতুন জীবন সম্পর্কে তোমাকে কিছু কথা বলি। কিন্তু
যখনই বলতে চেয়েছি, জিহবা আড়ষ্ট হয়ে এসেছে। আজ
এই লেখাটির মাধ্যমে আমার মনের কথাগুলো তোমাকে পৌঁছে দিচ্ছি। আশা
করি তুমি এর প্রতিটি শব্দ মন দিয়ে পড়বে, প্রতিটি বাক্য হৃদয়ের মণিকোঠায় গেঁথে নেবে।
প্রিয়
মা! আমরা দুর্বল-অযোগ্য, তবুও আল্লাহ আমাদের অসংখ্য নিআমত দান করেছেন। আপাদমস্তক
আল্লাহর রহমত আমাদের ঢেকে রেখেছে। আল্লাহ
তাআলার এ নিআমতরাজির মধ্যে
সবচেয়ে বড় নিআমত হল ‘ঈমান’। কুরআনে
কারীম ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ- এ দুই নিআমতও
আমার দৃষ্টিতে ঈমানের নিআমতের অন্তর্ভুক্ত। কারণ
ঈমানের কারণেই আমরা এ দুই নিআমতের
কদর করতে পারছি। নিআমত
যত বড় হয়, তত গুরুত্ব দিয়ে তা হেফাজত করতে হয়। ঈমানের
এই মহা নিআমতের কদর করবে, এর ব্যাপারে সচেতন থাকবে। এ-ক্ষেত্রে কোনো অবহেলা-ত্রুটির শিকার হবে না। ইবরাহীম
আ. ও ইয়াকুব আ.
নিজ সন্তানদের ওসিয়ত করেছিলেন, (তরজমা) ‘আল্লাহ তোমাদের জন্যে দ্বীনে ইসলামকে মনোনীত করেছেন, সুতরাং পূর্ণ সমর্পিত না হয়ে যেন তোমাদের মৃত্যু না হয়।’ সেই
ওসিয়ত আমিও তোমাদের করছি। ঈমানের
এই মহা নিআমত এবং এ-নিআমত প্রাপ্তির
সৌভাগ্যময় উপলব্ধি পরবর্তী প্রজন্মের কাছেও পৌঁছে দিবে।
সবর
ও শোকরকে জীবনের ‘প্রতীক’বানিয়ে রাখবে। জীবনে
ভালো-মন্দ উভয় পরিস্থিতিরই সম্মুখীন হতে হবে। সবকিছু
মানুষের মনমতো ঘটবে- এমনটি হওয়া অসম্ভব। পরিস্থিতি
কখনো তোমার অনুকূল হবে, কখনো প্রতিকূল হবে। অনুকূল
পরিস্থিতিতে আল্লাহর শোকর আদায় করবে। প্রতিকূল
অবস্থায় সবর করবে। সবর
ও শোকরকে যে নিজের জন্যে অনিবার্য করে নেয় সে কখনো দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয় না। যে
সবর ও শোকর অবলম্বন
করে আল্লাহ তার সাথে থাকেন, তাকে সাহায্য করেন। আল্লাহ
তাআলা ঈমানের অর্ধেক রেখেছেন সবরের মধ্যে, আর অর্ধেক রেখেছেন শোকরের মধ্যে। মনে
রেখ, মানুষ বড় ত্বরাপ্রবণ। সেই
সঙ্গে বড় বিস্মৃতিপ্রবণ। খুব
দ্রুত তার স্মৃতি থেকে কথা হারিয়ে যায়। হাজারো
অনুগ্রহ মুহূর্তে ভুলে যায়। সামান্য
কষ্টে অস্থির হয়ে ওঠে। তুমি
এমন হবে না।
প্রিয়
মা! আমি আমার পড়াশোনা ও দীর্ঘ জীবনের
অভিজ্ঞতা থেকে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি,
যত উত্তম গুণাবলী আছে তার মাঝে সর্বোত্তম গুণ হল ই’তিদাল (মধ্যপন্থা
ও পরিমিতিবোধ)। মুসলিম
উম্মাহর শ্রেষ্ঠত্বের কারণও এই ই’তিদাল।
ই’তিদাল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনের এক উজ্জ্বলতম দিক। জীবনের
সব ক্ষেত্রে ই’তিদাল থাকা
বাঞ্ছনীয়। দ্বীনী
বিষয় হোক বা দুনিয়াবী, দেহ ও শরীরের সাথে
সম্পৃক্ত বিষয় হোক বা হৃদয় ও আত্মার সাথে
সম্পৃক্ত- জীবনের সর্বাঙ্গনে ই’তিদাল থাকা
আবশ্যক। সে-দ্বীনদারি বাঞ্ছিত নয় যা বৈরাগ্যে গিয়ে ঠেকে। আবার
এমনটি হওয়াও উচিত নয় যে, জীবনের একমাত্র ধ্যান-খেয়াল হবে দুনিয়া। সব
সময় আরাম আয়েশের চিন্তা করা, দেহের পরিচর্যা আর সাজ গোজ নিয়ে ব্যস্ত থাকা ঠিক নয়। আবার
অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন থাকা, অকারণে নিজেকে কষ্ট দেওয়াও উচিত না। স্ত্রী
হিসেবে একটি মেয়ের সীমারেখার মধ্যে থেকে কিছুটা সাজাগোজও করা উচিত। যে-মেয়ে এগুলোর ব্যাপারে উদাসীন থাকে সে স্বামীর হক নষ্ট করে; বরং সে নিজের হকও নষ্ট করে। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম
রাদিয়াল্লাহু আনহুম যখন সফর থেকে ফিরে আসতেন তখন আগেই ঘরে ঘরে খবর পাঠাতেন যেন পুরুষেরা ঘরে আসার আগে মেয়েরা নিজেদের গুছিয়ে নিতে পারে।- সহীহ
বুখারী, হাদীস ৫০৭৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭১৫
মা!
যবান আল্লাহ তাআলার এক মহা নিআমত। এই
যবান আল্লাহ তাআলার এক সৃষ্টিকারিশমা। ছোট্ট
এই গোশতের টুকরার মাঝে আল্লাহ তায়ালা বিপরীতমুখী সব শক্তি দিয়ে রেখেছেন। ছোট্ট
এই গোশতের টুকরাটি একটি অগ্নিকাণ্ডের জন্ম দিতে পারে। আবার
সেই অগ্নি নির্বাপনও করতে পারে। কাঁটাগুল্মময়
জঙ্গল যেমন তৈরি করতে পারে, তেমনি পারে ফুলে ফুলে শোভিত একটি বাগান জন্ম দিতে। এটি
দুটি হৃদয়ে বিভেদরেখা টেনে দিতে পারে, আবার সেই রেখা মুছেও দিতে পারে। ঈমান
ও কুফরের মাঝে পার্থক্য টানার জন্যে খুব বেশি কিছু করার প্রয়োজন পড়ে না। একটি
বাক্যই যথেষ্ট। কিন্তু
এর যে-ফল দাঁড়ায় তার জন্যে কখনও সর্বস্ব দিয়ে দিতে হয়। যবানের
অনিষ্ট থেকে সে-ই বাঁচতে পারে
যে মুখে শরীয়তের লাগাম টেনে দেয়, যেখানে মুখ খোলাটা দুনিয়া-আখেরাতের জন্যে কল্যাণকর সেখানেই শুধু মুখ খোলে। যেখানে
কথা বলার কোনো ফায়দা নেই বা কথা বললে কোনো ক্ষতির আশঙ্কা আছে সেখানে সে চুপ থাকে। ঘরে
ঘরে ঝগড়াঝাটি, কলহ-বিবাদ আর সংসার ভেঙ্গে যাওয়ার যে কথা শোনা যায় খোঁজ নিলে দেখা যাবে এর সত্তর ভাগ কারণ যবানের অসংযত ব্যবহার। এ
জন্যেই যবানে নুবুয়তে ঘোষিত হয়েছে, যে চুপ থাকল সে মুক্তি পেল।- সহীহ
বুখারী, হাদীস ৫০৭৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস৭১৫
অন্য
একটি হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমি তার জন্যে জান্নাতের একপাশে একটি ঘরের জামিন হচ্ছি, যে বিবাদ করা থেকে বিরত থাকে, যদিও হক তার পক্ষে হয়। আমি
তার জন্যে জান্নাতের মধ্যস্থলে একটি ঘরের জামিন হচ্ছি, যে মিথ্যা বর্জন করে; ঠাট্টাচ্ছলেও মিথ্যা বলে না। এবং
তার জন্যে জান্নাতের উচ্চস্তরে একটি ঘরের জামিন হচ্ছি, যে নিজের আচার-আচরণকে সুন্দর করে। - সুনানে
আবু দাউদ, হাদীস ৪৮০০
আমার
ক্ষুদ্রচিন্তায়, যদি এই একটি হাদীসের উপর সবাই আমল করতে পারে তাহলে আমাদের সব কলহ-বিবাদ শেষ হয়ে যাবে।
পেয়ারী
বেটি! এ যুগের একটি
দুঃখজনক বাস্তবতা হল, সবাই প্রাপ্য সম্পর্কে অতিরিক্ত সচেতন কিন্তু কর্তব্য সম্পর্কে সীমাহীন গাফেল। শত
অভিযোগ, শত বিবাদ-বিতর্কের পেছনের কারণ এই বিরুদ্ধ চিন্তা। বাবা-মা, ভাই-বোন, সন্তান-সন্ততি, স্বামী-স্ত্রী, ছোট-বড়, মালিক-শ্রমিক, শাসক-শাসিত সবাই এই বিরুদ্ধ চিন্তার কারণে একে অপরের প্রতি অসন্তুষ্ট।
এর
বিপরীতে যদি আমরা কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হই, নিজের করণীয়’র প্রতি গুরুত্ব
দিই আর প্রাপ্যের ব্যাপারে ছাড় দিই; এ ক্ষেত্রে অপরকে
প্রাধান্য দেওয়ার মনোভাব পোষণ করি, তাহলে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি তো অর্জন করতে পারবই, বিপরীতপক্ষও একসময় প্রভাবিত হবে। সে
যত পাষাণদিলই হোক একদিন-না-একদিন তার মন তাকে ধিক্কার দিয়ে বলবেই- ওকে ওর প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। নেহাত
ভালো মানুষ বলে ও মুখ বুজে
সব সহ্য করে গেছে।
আমি
তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি, তুমি প্রাপ্যের চেয়ে কর্তব্যের ব্যাপারে বেশি
সচেতন হবে।
জানে
জিগার! এ যুগে ওয়াসওয়াসা
ও অমূলক ধারণা এক সংক্রামক ব্যাধির রূপ লাভ করেছে। এ
রোগকে হাজারো রোগ-ব্যাধির মূল বললে ভুল হবে না। প্রচুর
সংখ্যক লোক এ রোগে আক্রান্ত। এ
রোগ যে কত ভয়াবহ তা তুমি এ থেকে আন্দাজ
করতে পার যে, কুরআনে কারীমের শেষ সূরায় আল্লাহ তাআলা ওয়াসওয়াসা সৃষ্টিকারীর অনিষ্ট থেকে পানাহ চাইতে নির্দেশ দিয়েছেন। (তরজমা)
বলুন, আমি মানুষের প্রতিপালকের কাছে, মানুষের অধিপতির কাছে, মানুষের মাবুদের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি- আত্মগোপনকারী ওয়াসওয়াসা সৃষ্টিকারীর অনিষ্ট থেকে। যে
মানুষের মনে ওয়াসওয়াসা সৃষ্টি করে। সে
জ্বিন হোক বা মানুষ। -সূরা
নাস
সেখানে
আল্লাহ তাআলা এ বিষয়টিও স্পষ্ট
করে দিয়েছেন, ওয়াসওয়াসা সৃষ্টিকারী জ্বিনও হতে পারে, মানুষও হতে পারে। এ
ধরনের লোকদের থেকে তুমি সতর্ক থাকবে। এ
ধরনের নারী-পুরুষ, বান্ধবী, সমবয়সী মেয়ে-পড়শি থেকে দূরে থাকবে। অমূলক
ধারণা, ওয়াসওয়াসা ও কুমন্ত্রণার কারণে
অনেক সংসার ভেঙ্গে যেতে দেখেছি আমি। জটিল
রোগ-ব্যাধি, ব্যবসা-বাণিজ্যের সমস্যা, ঘরোয়া কলহ-বিবাদ বা কারো সন্তান হতে দেরি হচ্ছে- এ সমস্ত ক্ষেত্রে
দুষ্ট লোকেরা কানে এই কুমন্ত্রণা দেয় যে, এর পেছনে ননদ, ভাবী, শ্বাশুড়ি বা পাড়া-পড়শির হাত আছে; তারা হয়তো তাবিজ-কবজ করেছে। এ
ধরনের কথা কানে তুলবে না। আল্লাহর
উপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখবে। আল্লাহ
না চাইলে যত বড় যাদুকর বা আমেলই হোক, কেউ কারো কোনো ক্ষতি করতে পারে না।
আল্লাহ
না করুন, জীবনে চলতে গিয়ে যদি কোনো সমস্যায় পড়, যদি কখনো দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হও তাহলে চির অমুখাপেক্ষী আল্লাহর দরবারে হাত তুলে বলবে, ‘হে ‘ফকিরের’রব! আমার পেরেশানি দূর করে দাও।’ আমি
কসম করে বলছি, আমি ও আমার মত
সব মানুষ ‘ফকির’, ধনী ও অমুখাপেক্ষী একমাত্র
তিনি। সমস্যা
থেকে উদ্ধার পাওয়ার সবচেয়ে কার্যকর হাতিয়ার এই দুআ। এই
হাতিয়ারে যেন কখনো মরচে না পড়ে।
এ
বিষয়টিও বলে দেওয়া জরুরি মনে হচ্ছে- নিজের ইলম-কালাম, আমল-আখলাক নিয়ে কখনো গর্ব করবে না। আমাদের
আল্লাহ ‘তাওয়াযু’ (বিনয়) পছন্দ করেন। ছাহিবে
ইলমের উচিত অন্যদের চেয়ে বিনয়ী হওয়া। কারণ
ফলদার গাছ ঝুঁকে থাকে। যে
বিনয়ী আচরণ করে সে মানুষের সম্মান-শ্রদ্ধা পায়। আর
যে অহংকার করে সে দুনিয়া-আখেরাতে সব জায়গায় লাঞ্ছিত হয়। ঐ
হাফেজা ও আলেমা মেয়েরা
ইলমের রূহ থেকে বঞ্চিত থাকে, ইলমের সমুদ্র থেকে কয়েক ফোঁটা ইলম নিয়ে হজম করতে না পেরে যারা সবাইকে তুচ্ছ নজরে দেখতে থাকে।
বেটি!
আমি জানি এখন বিয়েশাদিতে কী ধূমধাম হয়। কত
রসম-রেওয়াজ আর প্রথা পালন করা হয়। যৌতুকের
প্রদর্শনী হয়। গায়ে
হলুদ, বৌভাত, সেলামি- আরও কত কী। এগুলোর
পেছনে লক্ষ টাকা খরচ করা হয়। তুমি
অন্যান্য বিয়েশাদি দেখে হীনম্মন্যতার শিকার হবে না। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রী ও মেয়েদের সাদাসিধে
বিয়ের কথা মনে রাখবে। আমি
কীভাবে আল্লাহর শোকর আদায় করব জানি না- বিভিন্নজন পীড়াপীড়ি করা সত্তেও বিয়ের আয়োজন আমি যথাসম্ভব সাদাসিধা রাখার চেষ্টা করেছি।
আমি
তোমাকে খুব বেশি কিছু দিয়ে দিতে পারিনি। কিন্তু
বিদায় দেওয়ার সময় আমি তোমাকে দু’টো জিনিস দিয়েছি। কুরআন
ও তাফসীর। পূর্ববর্তী
মনীষীদের জীবনীতে আছে, তাঁদের কেউ যদি তাঁর মেয়েকে কুরআন বোঝার মত যোগ্য করে তুলতে পারতেন আর বিদায় বেলা তাকে কুরআন মজীদের একটি কপি (সেকালে হাতে লিখে কপি তৈরি করতে হত। এখনকার
মত প্রেস তখন ছিল না।-অনুবাদক)
দিয়ে দিতে পারতেন তাহলে বলা হত, তিনি তাঁর মেয়েকে পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান উপঢৌকন দিয়েছেন। এক
দুর্বল ও ভগ্নহৃদয় পিতার
পক্ষ থেকে দেওয়া এই অতুলনীয় হাদিয়া তোমার জন্য মোবারক হোক...।
ভাষান্তর:
হুজ্জাতুল্লাহ
0 comments:
Post a Comment