Saturday, January 3, 2015

দ্রুত বিবাহ করার উপকারিতাঃ কুরআন হাদীস ও আধুনিক বিজ্ঞানের মতে

রাসুল (সাঃ) দ্রুত বিবাহ করার জন্য আজ থেকে ১৪০০ শতাধিক বছর আগে তাগিদ দিয়েছেন। অথচ, এতদিন পরে এসে গবেষকগণ দেরীতে বিবাহ করা কিংবা বিবাহে অনাগ্রহী থাকার ক্ষতিকর দিকগুলো জানতে পেরেছেন। শুধু তাই নয় তারা রাসুল (সাঃ) এর কথাগুলোই মনের অজান্তে বলে যাচ্ছেন। 

যখনই বিজ্ঞানীরা নতুন নতুন কোন বৈজ্ঞানিক গবেষণা করছেন আমরা দেখতে পাচ্ছি, রাসুল (সাঃ) সেগুলো উল্লেখ করতে ভুলে যাননি। পবিত্র কুরআন এমন একটি আশ্চর্যজনক গ্রন্থ যা আসমান যমীনের বিভিন্ন রহস্যাবলীতে পরিপূর্ণ। রাসুল(সাঃ) এর হাদীসও নিঃসন্দেহে আল্লাহ্তায়ালার পক্ষ থেকে ওহী। আর কারণেই পবিত্র কুরআনের মত সেটাও বিভিন্ন গোপণ রহস্য, মিরাকেল আশ্চর্যজনক বিষয়ে ভরপুর যে তা গুণে শেষ করা যাবে না। 

আমি সুপ্রিয় পাঠকদের সামনে দ্রুত বিবাহ করার উপকারীতা নিয়ে বিজ্ঞানের সর্বশেষ গবেষণার ফলাফল তুলে ধরার আগে রাসুল (সাঃ) এর হাদিস নিয়ে নাস্তিক ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা কিভাবে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করত তা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। 

রাসুল (সাঃ) যখন দ্রুত বিবাহের জন্য উৎসাহ দিয়ে বললেন: 
يا معشر الشباب من استطاع منكم الباءة فليتزوج
 
অর্থাৎ, হে যুবকেরা! তোমাদের মধ্যকার যে বিবাহের সামর্থ্য রাখে সে যেন বিবাহ করে নেয়। (বুখারী-৫০৬৫, মুসলিম-১৪০০, আবু দাউদ-২০৪৬, নাসায়ী-২২৪০, মুসনাদে আহমাদ, ইবনে আবি শায়বা,ইবনে হিব্বান, বায়হাকী) 

তখন তারা বলত, মুহাম্মাদ (সাঃ) এর শুধু বিয়ে আর সন্তান-সন্ততি নিয়েই চিন্তা। এটা ছাড়া তার আর কোন কাজ নেই। কিন্তু, বিজ্ঞান এসে রাসুল (সাঃ) এর কথার সত্যতা ইসলাম বিদ্বেষীদের কথার অসারতা প্রমাণ করল। 

বিগত কয়েক বছর ধরে জিনা অশ্লীলতার কারণে কয়েক মিলিয়ন মানুষ এইডসে আক্রান্ত হলে কিছু গবেষক ব্যক্তির স্বাস্থ্য ঠিক রাখা এবং অশ্লীলতা সমকামিতায় জড়িত হয়ে মৃত্যুবরণের হাত থেকে সবাইকে বাচানোর জন্য দ্রুত বিবাহ করার প্রতি গুরুত্বারোপ করে আসছে। 

বিজ্ঞানীরা গবেষণায় জানতে পেরেছে, দেরীতে তথা ৪০ বছর বয়সের পরে বিবাহ সমাজ ব্যক্তির উপর খারাপ প্রভাব ফেলে। কোন লোকের স্ত্রী সন্তান সন্ততি থাকলে শারিরিক অবস্থা অনেক ভাল থাকে। কিছু কিছু গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, অবিবাহিত বৃদ্ধ ব্যক্তিরা অধিক পরিমাণে হার্ট এটাক মানসিক রোগের শিকার হন। 

এরপর কিছু গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে-মানুষকে অধিক সুস্থ থাকতে হলে তার জন্য জৈবিক চাহিদা পূরণ করা জরুরী। গবেষকগণ জোর দিয়ে বলেছেন, বিবাহিতরা অধিক পরিমাণে সুখী জীবনযাপন করে এবং তাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তাদের চেয়ে অনেক শক্তিশালী, যারা স্ত্রী ছাড়াই একাকী জীবন যাপণ করে। এখানেই হয়ত আল্লাহ্তায়ালার বাণীর সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে- 

আল্লাহ্তায়ালা বলেন: 
وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَوَدَّةً وَرَحْمَةً إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ
 
অর্থাৎ, আর এটাও আল্লাহ তায়ালার নিদর্শনসমুহের মধ্যে একটি যে,তিনি তোমাদের মধ্য থেকেই তোমাদের স্ত্রীদেরকে তৈরী করেছেন যেন তোমরা তাদের কাছ থেকে প্রশান্তি লাভ করতে পারো। আর তিনি তোমাদের মাঝে হৃদ্যতা মায়া-মমতা সৃষ্টি করে দিয়েছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল ব্যক্তিদের জন্য অনেক নিদর্শন রয়েছে।" (সুরা রুমঃ২১) 

আয়াতের (لِتَسْكُنُوا) "যেন তারা প্রশান্তি লাভ করতে পারে" অংশটুকু সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করছে, মানুষের মনে বিবাহের পরে আত্মিক প্রশান্তির সৃষ্টি হয়। ছাড়া আয়াতের (مَوَدَّةً وَرَحْمَةً) "হৃদ্যতা মায়ামমতা" অংশটুকু জৈবিক কামনা পুরণের দিকেই ইংগিত করছে। এটা এমন একটি বৈজ্ঞানিক মিরাকেল যা ইতিপুর্বে কেউ জানত না। এমনকি পাদ্রীরা ধারণা করত "বিবাহ" মানুষের জন্য ক্ষতিকর বিষয়। এজন্য তারা এদিকে অনাগ্রহী থাকত। 

আর এজন্যই রাসুল (সাঃ) বলেছেন: 
لا رهبانية في الإسلام
 
অর্থাৎ, ইসলামে কোন বৈরাগ্যতা নেই। (গারীবুল হাদিসঃ /২৮০) 

আরেকটি গবেষনায় প্রমাণিত হয়েছে-বিবাহিতরা অধিক পরিমাণে প্রতিভাবান সৃষ্টিশীল হয়ে থাকে এবং বিবাহিতা মহিলাগণ অধিক পরিমাণে প্রতিভাবতী মায়াবী হয়। গবেষণাতে বলা হয়েছে অবিবাহিত বৃদ্ধরা অন্যদের চেয়ে শত্রুতার দিকে বেশী ঝুকে পড়ে। একই সময়ে তাদের মাঝে একাকিত্ব অন্যদের থেকে দুরে থাকার প্রতি টান চলে আসে। এর কারণ হচ্ছে তারা প্রাকৃতিক জাগতিক চাহিদার বিপরীত দিকে চলছে। 

তবে, সর্বশেষ গবেষণাটি করা হয়েছে ডেনমার্কের Aarhus University ' গবেষকদের হাতে; আর তা ব্রিটেনের ডেইলি মেইল পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। তারা লক্ষ শিশুর উপর বড় ধরণের একটা গবেষণা করে দেখেছে, যেসব শিশু অল্প বয়স্ক পিতার ঔরসে জন্মগ্রহণ করেছে তারা অন্যদের চেয়ে বেশী জীবন লাভ করে। আর দেরীতে বিবাহ করলে তা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সন্তান শারিরিক সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ায় প্রভাব ফেলে। 

লক্ষ শিশুর স্বাস্থ্য নিয়ে নিখুতভাবে গবেষনা কর্ম সম্পাদনের সময় তারা টের পেয়েছে, যেসব শিশু তাদের বয়স এক বছর অতিক্রান্ত হওয়ার আগেই মারা গেছে তাদের সংখ্যা ছিল ৮৩১ জন। আর তাদের প্রায় অধিকাংশেরই পিতা দেরী করে বিবাহ করেছে। এছাড়া তারা তাদের মাঝে বিভিন্ন ধরণের সৃতিশক্তির তারতম্য দেখা গেছে; যা তাদেরকে দেরীতে বিবাহ করার ক্ষতি থেকে সতর্ক করেছে। গবেষণাটা এসেছে এভাবে--- 

The researchers warned: The risks of older fatherhood can be very profound and it is not something that people are always aware of.
 

অর্থাৎ, গবেষকগণ সতর্ক করে বলেছেন, দেরীতে পিতা হওয়া মারাত্মক সমস্যা বয়ে নিয়ে আসে এবং অনেকেই তা জানে না। দেখুন!! ডেনমার্কের গবেষকগণ কিভাবে মানুষকে দেরীতে পিতা হওয়া থেকে সতর্ক করছে!!! অথচ, তাদের অধিকাংশই নাস্তিক ইসলামকে স্বীকার করে না। 

আমি বলি, সুবহানাল্লাহ!! এটা কি সেটা নয় যার দিকে আজ থেকে ১৪০০ বছর আগেই রাসুল (সাঃ) আহ্বান করেছেন? রাসুল(সাঃ) কি বলেননি, (فمن رغب عن سنَّتي فليس مني) অর্থাৎ, যে আমার সুন্নাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে সে আমার উম্মত নয়!!! (বুখারী-৫০৬৩, মুসলিম-১৪০১, নাসায়ী-৩২১৭, মুসনাদে আহমাদ-১৩৫৩৪, বায়হাকীঃ সুনানুল কুবরা-১৩৪৪৮, সহীহ ইবনে হিব্বান-১৪) 

দেখুন!! রাসুল (সাঃ) কিভাবে তাদের থেকে নিজেকে মুক্ত করে নিচ্ছেন যারা বিবাহকে প্রত্যাখ্যান করছেন এবং তিনি বিবাহকে সুন্নাত বলে আখ্যা দিচ্ছেন যা করলে আল্লাহ্তায়ালা বিনিময়ে সাওয়াব বা প্রতিদান দান করবেন। কিভাবে দয়ার সাগর নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) আমাদের কল্যাণের জন্য, উপকারের জন্য এবং রোগ থেকে দূরে রাখার জন্য শিক্ষা নিয়ে এসেছেন। 

কিছু কিছু গবেষণা প্রমাণ করেছে, আমাদের প্রত্যেকের শরীরে বিবাহের জন্য বিশেষভাবে একটা জীবন্ত সময় আছে। নির্দিষ্ট সময় বয়স রয়েছে মানুষের বিবাহের জন্য তাদের উচিত সে সময়ের মধ্যেই বিবাহ করা। আর সে সময়টা হল বিশের দশক কিংবা তার চেয়ে সামান্য বেশী। আর যখনই বিবাহ উক্ত সময় থেকে একটু দেরীতে হবে তখন তা শারীরিক বিভিন্ন কোষ, এবং নর নারীর শুক্রানু ডিম্বানুর উপর খারাপ প্রভাব ফেলে। এর ফলে সন্তানের মানসিক শারীরিক সমস্যার প্রবল সম্ভাবনা থাকে। 



0 comments:

Post a Comment