Thursday, November 27, 2014

বিয়ের বিষয়ে ইসলাম কি বলে!


১. হজরত আবু নাজি (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসুলে কারিম (সা.) বলেন, 'তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি বিয়ের সামর্থ্য রাখে, অথচ বিয়ে করে না, তার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।' (আত তারগিব)

২. হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'যখন কোনো বান্দা বিয়ে করল তখন তার দ্বীনদারির (ধর্মপালনের) অর্ধেক পূর্ণ করল। এখন বাকি অর্ধেকের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় পাওয়া প্রয়োজন।' (আত তারগিব)

৩. হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'হে যুবকরা! তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি স্ত্রীর ভরণপোষণ দানে সক্ষম, তার বিয়ে করে নেওয়া উচিত। কেননা বিয়ে দৃষ্টি অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থান পবিত্র রাখে। আর যে ভরণপোষণ দানে সক্ষম নয়, সে যেন রোজা রাখে। কেননা রোজা তার জন্য পৌরুষহীনতার মতো (উত্তেজনা প্রশমিত করে)।' (মেশকাত শরিফ, ইমদাদুল ফতোয়া : খণ্ড ২, পৃষ্ঠা : ২৫৮)

৪. হজরত আবু নাজি (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, মুখাপেক্ষী! মুখাপেক্ষী! ওই পুরুষ, যার স্ত্রী নেই। সাহাবিগণ জিজ্ঞেস করলেন, যদি তার অনেক সম্পদ থাকে, তবুও কি সে মুখাপেক্ষী? রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'যদিও তার অনেক সম্পদ থাকে, তবুও সে মুখাপেক্ষী। তিনি আরো বলেন, মুখাপেক্ষী! মুখাপেক্ষী ওই নারী, যার স্বামী নেই। সাহাবিগণ জিজ্ঞেস করলেন, যদি তার অনেক সম্পদ থাকে, তবুও কি সে মুখাপেক্ষী? রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'যদিও তার অনেক সম্পদ থাকে, তবুও সে মুখাপেক্ষী।" (রাজিন) কেননা সম্পদের উপকারিতা, প্রশান্তি বা পার্থিব চিন্তামুক্ত সেই পুরুষের ভাগ্যে জুটে না, যার স্ত্রী নেই। সে নারীর ভাগ্যেও জুটে না, যার স্বামী নেই। বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, বিয়েতে জাগতিক ও পরকালীন অনেক বড় বড় উপকার রয়েছে। (হায়াতুল মুসলিমিন; পৃষ্ঠা : ১৮৭)

বিয়ে আল্লাহর বিশেষ দান বা উপহার। বিয়ের দ্বারা জাগতিক ও ধর্মীয় জীবন দুটোই ঠিক হয়ে যায়। মন্দ চিন্তা ও অস্থিরতা থাকে না। সবচেয়ে বড় উপকার হলো, অঢেল পুণ্য অর্জন। কেননা স্বামী স্ত্রী একত্রে বসে ভালোবাসার কথা বলা, খুনসুটি করা নফল নামাজ পড়ার চেয়েও পুণ্যময়। (বেহেশতি জেওর)

৫. হজরত আয়েশা (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'নারীকে বিয়ে করো, সে তোমার জন্য সম্পদ টেনে আনবে।' এখানে সম্পদ টেনে আনার উদ্দেশ্য হলো, স্বামী-স্ত্রী দুজনই জ্ঞানসম্পন্ন এবং একে অপরের কল্যাণকামী হয়ে থাকে। স্বামী এ কথা স্মরণ রাখে- আমার দায়িত্ব খরচ বেড়ে গেছে; তখন বেশি বেশি উপার্জন করার চেষ্টা করে। নারীও এমন কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করে, যা পুরুষ গ্রহণ করতে পারে না। ফলে তারা প্রশান্তি ও চিন্তামুক্ত হতে পারে। আর সম্পদের মূল উদ্দেশ্যই এটি। (হায়াতুল মুসলিমিন)

৬. হজরত মাকাল ইবনে ইয়াসার (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'তোমরা অধিক সন্তান প্রসবকারী নারীকে বিয়ে করো। কেননা আমি তোমাদের আধিক্যতা দ্বারা অন্যান্য উম্মতের ওপর গর্ব করব যে, আমার উম্মত এত বেশি!' [আবু দাউদ ও নাসায়ি শরিফ]

৭. হজরত আবু জর গিফারি (রাযি.) থেকে এক দীর্ঘ হাদিসে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) আক্কাফ (রাযি.)-কে বলেন, হে আক্কাফ! তোমার স্ত্রী আছে? তিনি বললেন, 'না।' রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, 'তোমার কি সম্পদ ও সচ্ছলতা আছে? তিনি বললেন, 'আমার সম্পদ ও সচ্ছলতা আছে।' রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, 'তুমি এখন শয়তানের ভাইদের দলভুক্ত। যদি তুমি খ্রিস্টান হতে তাদের রাহেব (পাদ্রী) হতে। নিঃসন্দেহে বিয়ে করা আমাদের ধর্মের রীতি। তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি হলো যে অবিবাহিত। তোমরা কি শয়তানের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চাও? শয়তানের কাছে নারীর চেয়ে ভয়ংকর কোনো অস্ত্র নেই। যা ধর্মভীরু মানুষের ওপরও কার্যকর। তারাও নারীসংক্রান্ত ফেতনায় জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু যারা বিয়ে করেছে, তারা নারীর ফেতনা থেকে পবিত্র। নোংরামি থেকে মুক্ত।'
এরপর বললেন, 'আক্কাফ! তোমার ধ্বংস হোক। তুমি বিয়ে করো, তা না হয় তুমি পশ্চাৎপদ মানুষের মধ্যে থেকে যাবে।' (মুসনাদে আহমাদ, জামেউল ফাওয়ায়েদ, ইমদাদুল ফতোয়া : খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ২৫৯)

বিয়ে একটি ইবাদত ও ধর্মীয় বিষয় যে কাজের প্রতি রোজ তাকিদ দেওয়া হয়েছে তথা ওয়াজিব; অথবা যে কাজে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে তথা মসতাহাব; বা যে কাজের বিনিময়ে সওয়াব প্রদানের অঙ্গীকার এসেছে, তা ধর্মীয় কাজ। আর যে কাজের ব্যাপারে এমনটি বলা হয়নি, তা জাগতিক কাজ। এই ভিত্তিতে পর্যালোচনা করলে স্পষ্ট হবে, বিয়ে ধর্মীয় কাজ। কেননা শরিয়ত কখনো বিয়ের জোর তাগিদ দিয়েছে, কখনো উৎসাহ দিয়েছে, কখনো সওয়াবের অঙ্গীকার করেছে। উপরন্তু বিয়ে না করার প্রতি নিন্দা জ্ঞাপন করেছে। তাই বিয়ে ধর্মীয় কাজ হওয়ার প্রমাণ। এ কারণে ফকিহ বা ধর্মবেত্তা মনীষীগণ বিয়ের যে প্রকার ও বিধান বর্ণনা করেছেন, সেখানে বিয়ে মোবাহ (অর্থাৎ যা করলে পুণ্য বা পাপ কোনোটাই হয় না) হওয়ারও কোনো স্তর বর্ণনা করেননি। এটা ভিন্ন কথা যে কোনো কারণে কখনো কখনো বিয়ে করা শরিয়তের দৃষ্টিতে মাকরুহ (অনুচিত); প্রকৃতপক্ষে বিয়ে করা ইবাদত। ইবাদত বলেই ধর্মবেত্তা মনীষীগণ বিয়ে করা অন্যকে ধর্মীয় শিক্ষা দান এবং নীরবে আল্লাহর ইবাদত করার চেয়ে উত্তম বলেছেন। (ফতোয়ায়ে শামি ও ইমদাদুল ফতোয়া)

রোজা যা ইবাদত হিসেবে সর্বজনস্বীকৃত; কোনো কোনো অবস্থায় তাতেও শাস্তির বিধান প্রদান করা হয়। শরিয়তের নীতি-নির্ধারকরা কাফফারার রোজার (যে রোজা পাপ মোচনের নিমিত্তে রাখতে হয়) ক্ষেত্রে যেমনটি বলেছেন। তার পরও কেউ রোজাকে জাগতিক বিষয় বলে না। তাহলে বিয়ের 'লেনদেন' বৈশিষ্ট্যের কারণে তাকে জাগতিক বিষয় বলা হবে কেন। বরং ভাবার বিষয় হলো, লেনদেনের বিপরীতে শাস্তির বিধান ইবাদতের তুলনায় অনেক দূরের। যখন ইবাদতের বিপরীতে শাস্তির বিধান আসার পরেও তা জাগতিক হয় না, তাহলে ইবাদতে (বিয়েতে) 'লেনদেন' বৈশিষ্ট্যযুক্ত হওয়ায় তা জাগতিক হয়ে যাবে না। (ইমদাদুল ফতোয়া : খণ্ড ২, পৃষ্ঠা : ২৬৮)

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন- 'আল্লাহপাক তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের জন্য জোড়া (সঙ্গী) সৃষ্টি করেছেন। যাতে তোমরা তাদের থেকে শান্তি লাভ করো। আর তিনি তোমাদের মাঝে দান করেছেন ভালোবাসা ও দয়ার্দ্রতা।'
অন্যত্র বলেন- 'তোমাদের স্ত্রীরা (সন্তান উৎপাদনের জন্য) তোমাদের ক্ষেতস্বরূপ।'

১. স্ত্রীকে বানানো হয়েছে পুরুষের আরাম ও শান্তির জন্য। বিষণ্নতা, দুশ্চিন্তা ও নানা কর্মব্যস্ততার মাঝে স্ত্রী শান্তি ও স্বস্তির মাধ্যম। মানুষ প্রাকৃতিকভাবেই ভালোবাসা ও বন্ধুত্বের অনুরাগী। স্ত্রীর সঙ্গে মানুষের বিরল ও আশ্চর্য ভালোবাসা ও বন্ধুত্ব সৃষ্টি হয়।

মেয়েরা সৃষ্টিগতভাবে দুর্বল। সন্তান প্রতিপালন, গৃহব্যবস্থাপনার দায়িত্বশীল ও সব কাজের শ্রেষ্ঠ সহযোগী। ফলে তার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে হবে। স্ত্রী ইজ্জত, সম্মান, সম্পদ ও সন্তান সংরক্ষণকারী এবং এর পরিচালক। স্বামীর অনুপস্থিতিতে সে তার সম্পদ, সম্মান ও দ্বীনের সংরক্ষণ করে।

২. মানুষ সৃষ্টিগতভাবে জৈবিক চাহিদা বা কামভাবের অধিকারী। স্ত্রী পুরুষের কাম-চাহিদা পূরণ করে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'স্ত্রীরা তোমাদের ক্ষেতস্বরূপ।' তারা বীজ উৎপাদনের উপযোগী। যেভাবে ক্ষেতের সেবা-যত্ন করা হয় ও তার একটি উদ্দেশ্য থাকে। তেমনি স্ত্রীরও বিশেষ কিছু উদ্দেশ্য রয়েছে, যা থেকে উপকৃত হওয়া উচিত।

৩. নারীর প্রতি পুরুষের যে আগ্রহ ও চাহিদা রয়েছে এবং পুরুষের প্রতি নারীর যে আগ্রহ ও চাহিদা রয়েছে, তা প্রাকৃতিক। বিয়ের মাধ্যমে তা পূরণ করলে মানুষের অন্তরে প্রকৃত ভালোবাসা ও পবিত্র চিন্তা-চেতনা তৈরি হয়। আর অবৈধভাবে পূরণ করা হলে তা মানুষকে অপবিত্র জীবনের প্রতি নিয়ে যায়। অন্তরে নোংরা চিন্তা ও কল্পনা সৃষ্টি করে। সুতরাং বিয়ে পবিত্র জীবনের অনুগামী করে এবং নোংরা জীবন থেকে ফিরিয়ে রাখে। [আল মাসালিহুল আকলিয়্যা: পৃষ্ঠা : ১৯২]

0 comments:

Post a Comment