বিবাহ মহান আল্লাহ তাআলা প্রদত্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ নেয়ামত

হে মানব, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিতি হও। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন। [সূরা আল-হুজুরাতঃ ১৩]

ঈমানদার পুরুষ ও নারীদের সম্পর্কে আল্লাহ্‌ তা'আলা পবিত্র কুরআনে বলেনঃ-

আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের সহায়ক। তারা ভাল কথার শিক্ষা দেয় এবং মন্দ থেকে বিরত রাখে। নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবন যাপন করে। এদেরই উপর আল্লাহ তা'আলা দয়া করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশীল, সুকৌশলী। [সূরা আত-তউবাঃ ৭১]

রাসুল (সাঃ) দ্রুত বিবাহের জন্য উৎসাহ দিয়ে বললেন:

হে যুবকেরা! তোমাদের মধ্যকার যে বিবাহের সামর্থ্য রাখে সে যেন বিবাহ করে নেয়। (বুখারী-৫০৬৫)

জীবনসঙ্গী পছন্দ করার বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

“চারটি বিষয়কে সামনে রেখে মেয়েদেরকে বিয়ে করা হয় — তার ধন সম্পদ, তার বংশমর্যাদা, তার রূপ-সৌন্দর্য ও তার ধর্মপরায়নতা। এক্ষেত্রে ধর্মপরায়ন স্ত্রী লাভে বিজয়ী হও, তোমার হাত কল্যাণে ভরে যাবে।” [বুখারী ও মুসলিম]

মহানবী (স:)একদিন যুবকদের লক্ষ্য করে বলেন:

যুবকদের লক্ষ্য করে বললেন, হে যুব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যে বিয়ের সামর্থ্য রাখে সে যেন বিয়ে করে। কেননা বিয়ে দৃষ্টিকে সংযত করে এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। আর যে বিয়ের যোগ্যতা রাখে না, তার উচিত রোজা পালন করা। (বোখারি ও মুসলিম)

Thursday, December 22, 2016

শীতলতা দান কর

“হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের স্ত্রীদের পক্ষ থেকে এবং আমাদের সন্তানের পক্ষ থেকে আমাদের জন্যে চোখের শীতলতা দান কর এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্যে আদর্শস্বরূপ কর।” 
-সূরা ফুরক্কান : ৭৪

Friday, December 16, 2016

তখনও সে মিসকীন

হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেছেন-
যে লোকের স্ত্রী নেই সে লোক মিসকীন,
তখন সাহাবীগণ বল্লেন- সে যদি মালদার হয়? 
হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বললেন, তখনও সে মিসকীন ।

-জামউল ফাওয়ায়িদ, বিবাহ অধ্যায়,খন্ড : ১, পৃষ্টা : ১২১ । 

Sunday, December 4, 2016

ভালোলাগা বৈধ নারীকে বিয়ে করে

আল্লাহ পাক কুরআনে বলেছেন, 
তোমরা বিয়ে করো যাদের তোমাদের ভালো লাগে। 
(সূরা মায়িদা : ৪)

এর অর্থ হলো, 
বিয়ে-ইচ্ছুক ব্যক্তি যেন তার ভালোলাগা বৈধ নারীকে বিয়ে করে।
(তাফসিরে আর-রাজি : ৯১৭১)

Thursday, November 24, 2016

এমন পবিত্র সম্পর্ক

আল্লাহ্ তায়ালা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে এমন পবিত্র সম্পর্ক দান করেছেন যে,
মানুষ এর থেকে বেশী প্রশান্তি অন্যকিছুতে পেতে পারে না।

Thursday, November 10, 2016

দ্বীনদার স্ত্রী / খারাপ স্ত্রী

​”একজন পুরুষের সাথে দ্বীনদার স্ত্রী হলো রাজার মাথায় স্বর্ণখচিত ​মুকুটের মতন, 
অন্যদিকে একজন পুরুষের সাথে খারাপ স্ত্রী হলো বৃদ্ধ ব্যক্তির মাথায় চাপানো ভারী বোঝার মতন।”

Friday, November 4, 2016

মা বানিয়েছেন

“ভালোবাসার ব্যাপারটায় মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে বেশি ভালো। তাই আল্লাহ তাদের মা বানিয়েছেন।”

Thursday, November 3, 2016

পরমবন্ধু

পুরুষের জীবনে স্ত্রীর মতো পরমবন্ধু আর কেহ হতে পারে না।

Tuesday, November 1, 2016

সতী সৌভাগ্যের বিষয় / অসতী দুর্ভাগ্যের বিষয়

সতী ও সাধ্বী পাত্রী যেমন পুরুষের জন্য বিরাট সৌভাগ্যের বিষয় তেমনি অসতী পাত্রী তার পক্ষে বড় দুর্ভাগ্যের বিষয়।
আল্লাহর রাসূল সা: বলেন, ‘সতী স্ত্রী এক সৌভাগ্যের সম্পদ; যাকে তুমি দেখে পছন্দ করো এবং যে তোমার মন মুগ্ধ করে, 
আর তোমার অবর্তমানে তার ব্যাপারে ও তোমার সম্পদের ব্যাপারে সুনিশ্চিত থাকে।
পক্ষান্তরে অসতী স্ত্রী দুর্ভাগ্যের আপদ; যাকে দেখে তুমি অপছন্দ করো এবং যে তোমার মন মুগ্ধ করতে পারে না। 
যে তোমার ওপর মানুষের হামলা চালায়।
আর তোমার অনুপস্থিতিতে তার ও তোমার সম্পদের ব্যাপারে সুনিশ্চিত হতে পারে না।’

Friday, October 28, 2016

রমণীদের মাঝে সেই উওম

রাসুল সঃ এরশাদ করেন-
তোমাদের রমণীদের মাঝে সেই উওম, যাকে দেখে স্বামীর মন আনন্দে ভরে উঠে,
তাকে কোন আদেশ করলে স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে তা পালন করে।
আর স্বামীর অনুপস্হিতিতে আপন সম্ভ্রম ও স্বামীর সম্পদ রক্ষা করে। 
(আবু দাউদ)

Tuesday, October 25, 2016

তাদের ব্যাপারে কল্যাণের অসিয়ত গ্রহণ কর

স্ত্রীলোকদের ব্যাপারে তোমরা কল্যাণের উপদেশ গ্রহণ কর। কেননা তাদেরকে তৈরীই করা হয়েছে পাঁজরের হাড় থেকে, আর পাজরের যা সবচেয়ে বক্র তা উপরের অংশে থাকে। তুমি যদি তা সোজা করতে যাও তবে তা ভেঙ্গে যাবে। আর যদি এমনি ছেড়ে দাও তবে তা চিরদিন বক্রই থেকে যাবে। অতএব, তাদের ব্যাপারে কল্যাণের অসিয়ত গ্রহণ কর।  -বুখারি : ৩৩৩১; মুসলিম : ১৪৬৮

স্বামী তার উপর সন্তুষ্ট


যদি কোনো স্ত্রী এমতাবস্থায় মারা যায় যে তার স্বামী তার উপর সন্তুষ্ট, তা হলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। -তিরমিজি : ১১৬১

Friday, August 12, 2016

কুরআন প্রদত্ত নারীর অধিকার দেনমোহর: পরিমাণ, গুরুত্ব ও মাপকাঠি


কুরআন প্রদত্ত নারীর অধিকার দেনমোহর: পরিমাণ, গুরুত্ব মাপকাঠি
মুফতি মাহফূযুল হক

বিয়ের সময় স্ত্রীকে দেনমোহর প্রদান করা স্বামীর ওপর ফরজ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা খুশি মনে স্ত্রীকে মহর পরিশোধ করো’ -সূরা আন নিসা:

মোহর পাওয়া স্ত্রীর অধিকার নারীকে অধিকার দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ তাই অন্যসব অধিকারের মতো স্বামীর কাছে দেনমোহর দাবি করা স্ত্রীর জন্য কোনো দূষণীয় নয় অনেকেই মনে করেন, দেনমোহরের টাকা স্ত্রীকে দিতে হয় শুধুমাত্র বিয়ের বিচ্ছেদ ঘটলে এটা অজ্ঞতা চরম ভুল ধারণা বিয়ে বিচ্ছেদ না হলেও দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করা ফরজ

স্ত্রীকে মোহর সম্পূর্ণ বা আংশিক পরিশোধ না করলে তা স্বামীর ওপর ঋণ হয়ে থাকবে এটা পরিশোধের পূর্বপর্যন্ত স্বামী ঋণগ্রস্ত আর স্ত্রী পাওনাদার অবস্থায় স্বামী মারা গেলে তার সম্পদ ওয়ারিশদের মাঝে ভাগ করার পূর্বে স্ত্রীর মোহর পরিশোধ করতে হবে আর স্ত্রী আগে মারা গেলে স্ত্রীর ওয়ারিশদের মাঝে তার মোহর ভাগ করে দিতে হবে তাই অন্যান্য ঋণের মতোই গুরুত্ব দিয়ে যতো দ্রুত সম্ভব দেনমোহর পরিশোধ করতে হয়

বাসর রাতে, স্ত্রীর মৃত্যুর সময়, স্বামীর মৃত্যুর সময় বা অন্য কোনো সময় পরিস্থিতিতে স্ত্রীর কাছ থেকে মোহরের মাফ চেয়ে নেওয়া শরিয়তে গ্রহণযোগ্য নয় মাফ চেয়ে নিলেও স্বামী মোহর দিতে বাধ্য

সূরা নিসার ২৪ নম্বর আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয়, মোহর হতে হবে বিক্রয়যোগ্য বস্তু সম্পদ আর হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, মোহরের নূন্যতম পরিমাণ হবে দশ দিরহাম আধুনিক পরিমাপে তা প্রায় ৩০.৬১৮ গ্রাম রুপা মোহরের সর্বোচ্চ কোনো পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়নি নূন্যতম পরিমাণের ঊর্ধ্বে যে কোনো পরিমাণকেই মোহর নির্ধারণ করা যাবে তবে স্বামী যেহেতু দেনমোহর পরিশোধ করতে বাধ্য- তাই তার পরিশোধের সামর্থ্য বিবেচনা করে তা নির্ধারণ করা উচিৎ এমন কোনো সিদ্ধান্ত তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া আদৌ উচিৎ হবে না- যাতে সে গুনাহগার হয়

নবীকন্যা হজরত ফাতেমা (রা.) হজরত আলী (রা.)-এর বিয়ের সময় ধার্যকৃত মোহর মুসলিম সমাজে মোহরে ফাতেমি নামে পরিচিত বর্তমানে অনেক ধার্মিক পরিবার বিয়ের সময় মোহরে ফাতেমি পরিমাণ দেনমোহর নির্ধারণ করে থাকেন অনেকেই দেনমোহরের জন্য মোহরে ফাতেমিকে সুন্নত বলে মনে করেন কিংবা খুব গুরুত্বের সঙ্গে এটা বিবেচনা করেন এটা নিছক কুসংস্কার ভুল প্রথা বৈ অন্যকিছু নয়

কেননা, মোহরে ফাতেমি যদি সুন্নতি হতো তবে সাহাবারা মোহরে ফাতেমির চেয়ে কম-বেশি মোহর ধার্য করে বিয়ে করতেন না যেহেতু সাহাবারা মোহরে ফাতেমিকে অনুসরণ করেননি বরং সামর্থ্য বিবেচনায় বিভিন্ন তারা মোহর নির্ধারণ করেছেন, তাই মোহরে ফাতেমি সুন্নত নয় বরং দেনমোহর নির্ধারণের জন্য সুন্নত হলো- এমন সর্বোচ্চ পরিমাণ যা পরিশোধ করার সামর্থ্য স্বামীর আছে

হজরত উমরের (রা.) খেলাফতকালে যখন মুসলমানদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসে- তখন সাহাবারা তাদের সন্তানদের বিয়েতে মোহরে ফাতেমির চেয়ে অনেক গুণ বেশি মোহর নির্ধাণ করতে শুরু করেন হজরত উমর (রা.) মোহরের ক্রমবৃদ্ধির গতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিলেন কিন্তু সূরা নিসার ২০ নম্বর আয়াতের কারণে তা করেননি কেননা, ওই আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয়; মোহর অনেক অনেক বেশিও হতে পারে

তাই, কোনো প্রকার বিচার-বিবেচনা ছাড়া ঢালাওভাবে সবার জন্য মোহরে ফাতেমি নির্ধারণ করলে জটিলতর এমন দুটি সমস্যা সৃষ্টি হয়- যা ইসলাম আদৌ পছন্দ করে না স্বামীর যদি মোহরে ফাতেমি পরিশোধের সামর্থ্য না থাকে তবে সে ক্ষেত্রে- স্বামী হয় নির্যাতিত মোহর পরিশোধ করতে না পারায় সে হয় গুনাহগার

আবার মোহরে ফাতেমির চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ মোহর পরিশোধের সামর্থ্য যদি স্বামীর থাকে তবে সেক্ষেত্রে মোহরে ফাতেমিকে দেনমোহর নির্ধারণ করার দ্বারা স্ত্রীকে ঠকানো হয় নারীত্বের চরম অবমাননা করা হয় তাই মোহরে ফাতেমিকে নয়, বরং স্বামীর সামর্থ্যরে সর্বোচ্চ পরিমাণকে দেনমোহর করা উচিৎ লক্ষ্য করতে হবে, স্বামী যেন গুনাহগার না হয়- আবার স্ত্রীও যেন না ঠকে

এর পরেও কেউ যদি মোহরে ফাতেমিকে দেনমোহর করতে চায় তবে করতে পারে নবীকন্যা হজরত ফাতেমার বিয়ের মোহর ছিলো- ৪৮০ দিরহাম বর্তমানের পরিমাপে তার পরিমাণ প্রায় ১৩১.২৫ ভরি রুপা বা ১৫৩০. গ্রাম রুপা

Friday, June 24, 2016

বিদায় বেলা

সাধারণত মায়েরাই মেয়েদের সার্বিক দেখাশোনা করেন কারণে মায়ের সাথেই মেয়েদের সম্পর্ক থাকে বেশি তাই বিদায়ের আগে মেয়েদের যেসব বিষয় বুঝিয়ে দেওয়া দরকার তা মায়েরাই করে থাকেন বিদায়ের আগে মেয়ের বাবারও মেয়েকে অনেক কিছু বলার থাকে বিশেষ করে সে-বাবা যদি হন একজন সচেতন মানুষ কিন্তু তখন মনে যে আবেগের ঢেউ থাকে তাতে শেষ পর্যন্ত আর কিছুই বলা হয়ে ওঠে না- জিহ্বা আড়ষ্ট হয়ে আসে, কথা বলার শক্তি ফুরিয়ে আসে কলমের আশ্রয় গ্রহণ করা ছাড়া অপারগজনকেরজন্যে তখন আর কোনো পথ খোলা থাকে না কলমের আশ্রয় নিয়ে এই লেখাটিতে একজনজনকেরসেই না-বলা কথাগুলোকে ধারণ করার চেষ্টা করা হয়েছে, বিদায় বেলা যা তিনি মেয়েকে মুখ ফুটে বলতে পারেননি সব পিতার মনেই হয়তো অনুভূতিগুলো থাকে নতুন জীবনে প্রবেশকারী মেয়েরা যদি কথাগুলো মনে রাখে তাহলে হয়তো তাদের সংসার-জীবন সুখী হবে

প্রিয় মা! এই তো সেদিনকার কথা, তুমি আমাদের ঘরে ফুল হয়ে ফুটেছিলে আল্লাহ জানেন, তোমার জন্মের পর দয়াময় আল্লাহর দরবারে আমি কী শুকরিয়া আদায় করেছি! মেয়েরা জন্ম নেয়রহমতহয়ে শুধু নিজের নয়, বাবা-মার রিযিকও একটি মেয়ে নিয়ে আসে তোমার জন্মের পর আমাদের রিযিকে যে-বরকত নেমে এসেছিল আমি তা অনুভব করতে পেরেছিলাম আমার স্পষ্ট মনে পড়ে তোমার ছোটবেলার কথা- তুমি হৈ চৈ করতে, বায়না-আবদার করতে, কখনো জেদ ধরতে- রেগে যেতে, আবার একটু পর উৎফুল্ল হয়ে উঠতে...
আল্লাহ তাআলার বড় অনুগ্রহ, তুমি এমন পরিবেশে চোখ মেলেছো, যেখানে তুমি খুব ছোটকালেই কালিমা নামাজ শিখে ফেলতে পেরেছো কুরআন মাজীদ হিফজ করেছো, যা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম সম্পদ এরপর কুরআন বোঝা, হাদীস শেখা ফিক্হ অধ্যয়নেরও সুযোগ হয়েছে এগুলো শেখার পথ আল্লাহ তোমার জন্যে সহজ করে দিয়েছিলেন আর আজ তোমার বিয়ে দিয়ে তোমার প্রতি শেষ দায়িত্বটুকু পালন করে আমি নিশ্চিত হচ্ছি এইমহৎদায়িত্বটি পালন করতে পেরে আমার খুশি হওয়ার কথা ছিল কিন্তু মনের আকাশজুড়ে ছেয়ে আছে কালো মেঘ কলিজার টুকরা মেয়েকে বিদায় দেওয়া কি সহজ! বিয়ের দিন ঠিক হওয়ার পর থেকে হয়তো একটি দিনও এমন যায়নি, যেদিন আমার চোখ থেকে অশ্রু ঝরেনি মন চাইছিল, নতুন জীবন সম্পর্কে তোমাকে কিছু কথা বলি কিন্তু যখনই বলতে চেয়েছি, জিহবা আড়ষ্ট হয়ে এসেছে আজ এই লেখাটির মাধ্যমে আমার মনের কথাগুলো তোমাকে পৌঁছে দিচ্ছি আশা করি তুমি এর প্রতিটি শব্দ মন দিয়ে পড়বে, প্রতিটি বাক্য হৃদয়ের মণিকোঠায় গেঁথে নেবে

প্রিয় মা! আমরা দুর্বল-অযোগ্য, তবুও আল্লাহ আমাদের অসংখ্য নিআমত দান করেছেন আপাদমস্তক আল্লাহর রহমত আমাদের ঢেকে রেখেছে আল্লাহ তাআলার নিআমতরাজির মধ্যে সবচেয়ে বড় নিআমত হলঈমান কুরআনে কারীম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ- দুই নিআমতও আমার দৃষ্টিতে ঈমানের নিআমতের অন্তর্ভুক্ত কারণ ঈমানের কারণেই আমরা দুই নিআমতের কদর করতে পারছি নিআমত যত বড় হয়, তত গুরুত্ব দিয়ে তা হেফাজত করতে হয় ঈমানের এই মহা নিআমতের কদর করবে, এর ব্যাপারে সচেতন থাকবে -ক্ষেত্রে কোনো অবহেলা-ত্রুটির শিকার হবে না ইবরাহীম . ইয়াকুব . নিজ সন্তানদের ওসিয়ত করেছিলেন, (তরজমা) ‘আল্লাহ তোমাদের জন্যে দ্বীনে ইসলামকে মনোনীত করেছেন, সুতরাং পূর্ণ সমর্পিত না হয়ে যেন তোমাদের মৃত্যু না হয়সেই ওসিয়ত আমিও তোমাদের করছি ঈমানের এই মহা নিআমত এবং -নিআমত প্রাপ্তির সৌভাগ্যময় উপলব্ধি পরবর্তী প্রজন্মের কাছেও পৌঁছে দিবে
সবর শোকরকে জীবনেরপ্রতীকবানিয়ে রাখবে জীবনে ভালো-মন্দ উভয় পরিস্থিতিরই সম্মুখীন হতে হবে সবকিছু মানুষের মনমতো ঘটবে- এমনটি হওয়া অসম্ভব পরিস্থিতি কখনো তোমার অনুকূল হবে, কখনো প্রতিকূল হবে অনুকূল পরিস্থিতিতে আল্লাহর শোকর আদায় করবে প্রতিকূল অবস্থায় সবর করবে সবর শোকরকে যে নিজের জন্যে অনিবার্য করে নেয় সে কখনো দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয় না যে সবর শোকর অবলম্বন করে আল্লাহ তার সাথে থাকেন, তাকে সাহায্য করেন আল্লাহ তাআলা ঈমানের অর্ধেক রেখেছেন সবরের মধ্যে, আর অর্ধেক রেখেছেন শোকরের মধ্যে মনে রেখ, মানুষ বড় ত্বরাপ্রবণ সেই সঙ্গে বড় বিস্মৃতিপ্রবণ খুব দ্রুত তার স্মৃতি থেকে কথা হারিয়ে যায় হাজারো অনুগ্রহ মুহূর্তে ভুলে যায় সামান্য কষ্টে অস্থির হয়ে ওঠে তুমি এমন হবে না

প্রিয় মা! আমি আমার পড়াশোনা দীর্ঘ জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি, যত উত্তম গুণাবলী আছে তার মাঝে সর্বোত্তম গুণ হল তিদাল (মধ্যপন্থা পরিমিতিবোধ) মুসলিম উম্মাহর শ্রেষ্ঠত্বের কারণও এই তিদাল তিদাল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনের এক উজ্জ্বলতম দিক জীবনের সব ক্ষেত্রে তিদাল থাকা বাঞ্ছনীয় দ্বীনী বিষয় হোক বা দুনিয়াবী, দেহ শরীরের সাথে সম্পৃক্ত বিষয় হোক বা হৃদয় আত্মার সাথে সম্পৃক্ত- জীবনের সর্বাঙ্গনে তিদাল থাকা আবশ্যক সে-দ্বীনদারি বাঞ্ছিত নয় যা বৈরাগ্যে গিয়ে ঠেকে আবার এমনটি হওয়াও উচিত নয় যে, জীবনের একমাত্র ধ্যান-খেয়াল হবে দুনিয়া সব সময় আরাম আয়েশের চিন্তা করা, দেহের পরিচর্যা আর সাজ গোজ নিয়ে ব্যস্ত থাকা ঠিক নয় আবার অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন থাকা, অকারণে নিজেকে কষ্ট দেওয়াও উচিত না স্ত্রী হিসেবে একটি মেয়ের সীমারেখার মধ্যে থেকে কিছুটা সাজাগোজও করা উচিত যে-মেয়ে এগুলোর ব্যাপারে উদাসীন থাকে সে স্বামীর হক নষ্ট করে; বরং সে নিজের হকও নষ্ট করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম যখন সফর থেকে ফিরে আসতেন তখন আগেই ঘরে ঘরে খবর পাঠাতেন যেন পুরুষেরা ঘরে আসার আগে মেয়েরা নিজেদের গুছিয়ে নিতে পারে- সহীহ বুখারী, হাদীস ৫০৭৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭১৫

মা! যবান আল্লাহ তাআলার এক মহা নিআমত এই যবান আল্লাহ তাআলার এক সৃষ্টিকারিশমা ছোট্ট এই গোশতের টুকরার মাঝে আল্লাহ তায়ালা বিপরীতমুখী সব শক্তি দিয়ে রেখেছেন ছোট্ট এই গোশতের টুকরাটি একটি অগ্নিকাণ্ডের জন্ম দিতে পারে আবার সেই অগ্নি নির্বাপনও করতে পারে কাঁটাগুল্মময় জঙ্গল যেমন তৈরি করতে পারে, তেমনি পারে ফুলে ফুলে শোভিত একটি বাগান জন্ম দিতে এটি দুটি হৃদয়ে বিভেদরেখা টেনে দিতে পারে, আবার সেই রেখা মুছেও দিতে পারে ঈমান কুফরের মাঝে পার্থক্য টানার জন্যে খুব বেশি কিছু করার প্রয়োজন পড়ে না একটি বাক্যই যথেষ্ট কিন্তু এর যে-ফল দাঁড়ায় তার জন্যে কখনও সর্বস্ব দিয়ে দিতে হয় যবানের অনিষ্ট থেকে সে- বাঁচতে পারে যে মুখে শরীয়তের লাগাম টেনে দেয়, যেখানে মুখ খোলাটা দুনিয়া-আখেরাতের জন্যে কল্যাণকর সেখানেই শুধু মুখ খোলে যেখানে কথা বলার কোনো ফায়দা নেই বা কথা বললে কোনো ক্ষতির আশঙ্কা আছে সেখানে সে চুপ থাকে ঘরে ঘরে ঝগড়াঝাটি, কলহ-বিবাদ আর সংসার ভেঙ্গে যাওয়ার যে কথা শোনা যায় খোঁজ নিলে দেখা যাবে এর সত্তর ভাগ কারণ যবানের অসংযত ব্যবহার জন্যেই যবানে নুবুয়তে ঘোষিত হয়েছে, যে চুপ থাকল সে মুক্তি পেল- সহীহ বুখারী, হাদীস ৫০৭৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস৭১৫
অন্য একটি হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমি তার জন্যে জান্নাতের একপাশে একটি ঘরের জামিন হচ্ছি, যে বিবাদ করা থেকে বিরত থাকে, যদিও হক তার পক্ষে হয় আমি তার জন্যে জান্নাতের মধ্যস্থলে একটি ঘরের জামিন হচ্ছি, যে মিথ্যা বর্জন করে; ঠাট্টাচ্ছলেও মিথ্যা বলে না এবং তার জন্যে জান্নাতের উচ্চস্তরে একটি ঘরের জামিন হচ্ছি, যে নিজের আচার-আচরণকে সুন্দর করে - সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৮০০
আমার ক্ষুদ্রচিন্তায়, যদি এই একটি হাদীসের উপর সবাই আমল করতে পারে তাহলে আমাদের সব কলহ-বিবাদ শেষ হয়ে যাবে

পেয়ারী বেটি! যুগের একটি দুঃখজনক বাস্তবতা হল, সবাই প্রাপ্য সম্পর্কে অতিরিক্ত সচেতন কিন্তু কর্তব্য সম্পর্কে সীমাহীন গাফেল শত অভিযোগ, শত বিবাদ-বিতর্কের পেছনের কারণ এই বিরুদ্ধ চিন্তা বাবা-মা, ভাই-বোন, সন্তান-সন্ততি, স্বামী-স্ত্রী, ছোট-বড়, মালিক-শ্রমিক, শাসক-শাসিত সবাই এই বিরুদ্ধ চিন্তার কারণে একে অপরের প্রতি অসন্তুষ্ট
এর বিপরীতে যদি আমরা কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হই, নিজের করণীয় প্রতি গুরুত্ব দিই আর প্রাপ্যের ব্যাপারে ছাড় দিই; ক্ষেত্রে অপরকে প্রাধান্য দেওয়ার মনোভাব পোষণ করি, তাহলে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি তো অর্জন করতে পারবই, বিপরীতপক্ষও একসময় প্রভাবিত হবে সে যত পাষাণদিলই হোক একদিন-না-একদিন তার মন তাকে ধিক্কার দিয়ে বলবেই- ওকে ওর প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে নেহাত ভালো মানুষ বলে মুখ বুজে সব সহ্য করে গেছে
আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি, তুমি প্রাপ্যের চেয়ে কর্তব্যের ব্যাপারে  বেশি সচেতন হবে

জানে জিগার! যুগে ওয়াসওয়াসা অমূলক ধারণা এক সংক্রামক ব্যাধির রূপ লাভ করেছে রোগকে হাজারো রোগ-ব্যাধির মূল বললে ভুল হবে না প্রচুর সংখ্যক লোক রোগে আক্রান্ত রোগ যে কত ভয়াবহ তা তুমি থেকে আন্দাজ করতে পার যে, কুরআনে কারীমের শেষ সূরায় আল্লাহ তাআলা ওয়াসওয়াসা সৃষ্টিকারীর অনিষ্ট থেকে পানাহ চাইতে নির্দেশ দিয়েছেন (তরজমা) বলুন, আমি মানুষের প্রতিপালকের কাছে, মানুষের অধিপতির কাছে, মানুষের মাবুদের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি- আত্মগোপনকারী ওয়াসওয়াসা সৃষ্টিকারীর অনিষ্ট থেকে যে মানুষের মনে ওয়াসওয়াসা সৃষ্টি করে সে জ্বিন হোক বা মানুষ-সূরা নাস
সেখানে আল্লাহ তাআলা বিষয়টিও স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ওয়াসওয়াসা সৃষ্টিকারী জ্বিনও হতে পারে, মানুষও হতে পারে ধরনের লোকদের থেকে তুমি সতর্ক থাকবে ধরনের নারী-পুরুষ, বান্ধবী, সমবয়সী মেয়ে-পড়শি থেকে দূরে থাকবে অমূলক ধারণা, ওয়াসওয়াসা কুমন্ত্রণার কারণে অনেক সংসার ভেঙ্গে যেতে দেখেছি আমি জটিল রোগ-ব্যাধি, ব্যবসা-বাণিজ্যের সমস্যা, ঘরোয়া কলহ-বিবাদ বা কারো সন্তান হতে দেরি হচ্ছে- সমস্ত ক্ষেত্রে দুষ্ট লোকেরা কানে এই কুমন্ত্রণা দেয় যে, এর পেছনে ননদ, ভাবী, শ্বাশুড়ি বা পাড়া-পড়শির হাত আছে; তারা হয়তো তাবিজ-কবজ করেছে ধরনের কথা কানে তুলবে না আল্লাহর উপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখবে আল্লাহ না চাইলে যত বড় যাদুকর বা আমেলই হোক, কেউ কারো কোনো ক্ষতি করতে পারে না
আল্লাহ না করুন, জীবনে চলতে গিয়ে যদি কোনো সমস্যায় পড়, যদি কখনো দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হও তাহলে চির অমুখাপেক্ষী আল্লাহর দরবারে হাত তুলে বলবে, ‘হেফকিরেররব! আমার পেরেশানি দূর করে দাওআমি কসম করে বলছি, আমি আমার মত সব মানুষফকির’, ধনী অমুখাপেক্ষী একমাত্র তিনি সমস্যা থেকে উদ্ধার পাওয়ার সবচেয়ে কার্যকর হাতিয়ার এই দুআ এই হাতিয়ারে যেন কখনো মরচে না পড়ে
বিষয়টিও বলে দেওয়া জরুরি মনে হচ্ছে- নিজের ইলম-কালাম, আমল-আখলাক নিয়ে কখনো গর্ব করবে না আমাদের আল্লাহতাওয়াযু’ (বিনয়) পছন্দ করেন ছাহিবে ইলমের উচিত অন্যদের চেয়ে বিনয়ী হওয়া কারণ ফলদার গাছ ঝুঁকে থাকে যে বিনয়ী আচরণ করে সে মানুষের সম্মান-শ্রদ্ধা পায় আর যে অহংকার করে সে দুনিয়া-আখেরাতে সব জায়গায় লাঞ্ছিত হয় হাফেজা আলেমা মেয়েরা ইলমের রূহ থেকে বঞ্চিত থাকে, ইলমের সমুদ্র থেকে কয়েক ফোঁটা ইলম নিয়ে হজম করতে না পেরে যারা সবাইকে তুচ্ছ নজরে দেখতে থাকে

বেটি! আমি জানি এখন বিয়েশাদিতে কী ধূমধাম হয় কত রসম-রেওয়াজ আর প্রথা পালন করা হয় যৌতুকের প্রদর্শনী হয় গায়ে হলুদ, বৌভাত, সেলামি- আরও কত কী এগুলোর পেছনে লক্ষ টাকা খরচ করা হয় তুমি অন্যান্য বিয়েশাদি দেখে হীনম্মন্যতার শিকার হবে না রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রী মেয়েদের সাদাসিধে বিয়ের কথা মনে রাখবে আমি কীভাবে আল্লাহর শোকর আদায় করব জানি না- বিভিন্নজন পীড়াপীড়ি করা সত্তেও বিয়ের আয়োজন আমি যথাসম্ভব সাদাসিধা রাখার চেষ্টা করেছি
আমি তোমাকে খুব বেশি কিছু দিয়ে দিতে পারিনি কিন্তু বিদায় দেওয়ার সময় আমি তোমাকে দুটো জিনিস দিয়েছি কুরআন তাফসীর পূর্ববর্তী মনীষীদের জীবনীতে আছে, তাঁদের কেউ যদি তাঁর মেয়েকে কুরআন বোঝার মত যোগ্য করে তুলতে পারতেন আর বিদায় বেলা তাকে কুরআন মজীদের একটি কপি (সেকালে হাতে লিখে কপি তৈরি করতে হত এখনকার মত প্রেস তখন ছিল না-অনুবাদক) দিয়ে দিতে পারতেন তাহলে বলা হত, তিনি তাঁর মেয়েকে পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান উপঢৌকন দিয়েছেন এক দুর্বল ভগ্নহৃদয় পিতার পক্ষ থেকে দেওয়া এই অতুলনীয় হাদিয়া তোমার জন্য মোবারক হোক...


ভাষান্তর: হুজ্জাতুল্লাহ